চলচ্চিত্রকর্মীর বেশিরভাগই সালমান শাহর ভক্ত কেন? জেনে নিন সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য
সারা দেশের মতো সালমানের কাজের জায়গা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএফডিসিতে রয়েছে তাঁর অনেক ভক্ত মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সারা দেশ। ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে তৈরি করেছিলেন ভক্ত। শুধু যে দেখতেই সুদর্শন ছিলেন তা নয়, অভিনয়গুণের কারণেও ভক্তরা আজও সালমান শাহকে ভুলে যেতে পারেনি।
তিন বছরের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন ২৭টির মতো চলচ্চিত্রে। যার প্রায় বেশির ভাগই সুপারহিট অথবা ব্লকবাস্টার হিট সারা দেশের মতো সালমানের কাজের জায়গা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএফডিসিতে রয়েছে তাঁর অনেক ভক্ত এফডিসি বা এফডিসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সালমানকে স্মরণ করার উদ্যোগ নেওয়া না হলেও সালমান রয়ে গেছেন এসব মানুষের হৃদয়ে। সেটা শুধু সালমানের অভিনয়ের জন্য নয়। ব্যক্তি সালমানকে কাছ থেকে দেখেছেন তাঁরা। পর্দার জনপ্রিয় এই মানুষটি তাঁদের কাছে ধরা দিয়েছিলেন ‘সাধারণ’ এক মানুষ হিসেবে।
কোনোদিন যাদের খোঁজ কেউ নেয়নি, তাঁদেরকেই কাছে ডেকে সালমান জানতে চেয়েছিলেন পরিবারের খবর। কথা বলতে বলতে কাঁধে হাতও দিয়েছিলেন। পর্দার ‘হিরো’, বাস্তবে কাছে পাওয়া সালমানকে তাই নীরবেই প্রতিদিন স্মরণ করেন তাঁরা। অভিনেতা মুক্তিযোদ্ধা রফিক সরকার। সালমান শাহর ২৭টি ছবির মধ্যে ১৩টি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। আজ সালমান শাহর জন্মদিনে রফিক সরকারের স্মৃতিতে ফিরে আসে সালমানের সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা। সালমান সম্পর্কে তিনি বলেন, “অমায়িক একটা ছেলে ছিল, কোনো দেমাগ ছিল না। কাজ করতে করতে আমাদের চোখের সামনেই এত জনপ্রিয় হয়ে গেল কিন্তু তাঁর আচরণ একটুও বদলায়নি।
সবার সঙ্গে সমানভাবে মিশে চলত। আবার নামাজও পড়ত। আমি তো আজান পড়লেই সুযোগ করে নামাজটা সেরে আসি। সঙ্গে সালমান শাহও যেত। আজানের পর তার শট থাকলে আমাকে বলত, ‘চাচা যান, নামাজটা পড়ে আসুন, আমি কাজা পড়ে নেব।’ এরপর দেখতাম শট শেষ করে ঠিকই নামাজটা পড়ে নিত। তাঁর জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাঁকে শান্তিতে রাখেন।” বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিস সহকারী মোহাম্মদ জাকির। ১৯৮৫ সাল থেকে শিল্পী সমিতির অফিসের কাজ দেখভাল করেন তিনি।
১৯৯৩ সালে নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিনি বলেন, ‘তিনি একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। জমিদার পরিবারের ছেলে হয়েও সবার সঙ্গে একই রকম ব্যবহার করতেন। সব টেকনিশিয়ানের নাম জানতেন। তাঁর মতো মানুষকে কেন ভালোবাসব না? শুটিংয়ের ফাঁকে রেস্ট নেওয়ার জন্য সমিতিতে প্রায়ই এসে বসে থাকতেন। সাধারণ শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলতেন। সামর্থ্য অনুযায়ী সবারই পাশে দাঁড়াতেন। তিনি চলচ্চিত্র থেকে যত টাকা কামিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি খরচ করেছেন।
এফডিসিতে কাজ না করলে সাধারণ শিল্পীরা কাজ পায় না। যে কারণে তিনি এখানে শুটিং করতে চাইতেন। সমিতিতে বসে বিভিন্ন পরিচালক প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলতেন। কিছু সিকোয়েন্স তিনি এফডিসিতে করতে চাইতেন। যে কারণে চলচ্চিত্র কর্মীরা ওনার এত ভক্ত।’ এফডিসির গেটের দারোয়ান হাফিজ উদ্দিন। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে এই চাকরি শুরু করেন হাফিজ। তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে গেট খুলে দিয়ে তারকাদের সালাম দেই। কোন তারকার কোন গাড়ি সেটি আমরা দেখলেই চিনতে পারি।
ওনারা আমাদের দিকে কখনো তাকিয়ে দেখেন না। আবার কালো কাচের ভেতরে কে আছে সেটিও আমরা সব সময় দেখতে পাই না।এফডিসিতে থেকেও কখনো আমার শুটিং দেখতে ইচ্ছা করে না। কারণ শুটিংয়ে গেলে ওনারা যদি বিরক্ত হন সেই ভয়ে যাওয়া হয় না।একদিন আমার শ্বশুড়বাড়ির এক আত্মীয় এসেছিলেন শুটিং দেখতে। ১৯৯৪ সালের ঘটনা। আমি তাকে নিয়ে চার নম্বর শুটিং ফ্লোরে গেলাম শুটিং দেখাতে। দেখি সালমান শাহ আর শাবনুর ম্যাডাম কোনো একটি ছবির শুটিং করছেন। আমি ভয়ে কাছে যাই না। কখন কী ভুল করি, আবার এমডি স্যারের কাছে বিচার যাবে। কিন্তু হঠ্যাৎ করেই আমাকে পেছন থেকে কেউ ডাক দিল। তাকিয়ে দেখি সালমান শাহ আমাকে ডাকছেন। আমি কাছে যাওয়ার পর ওনাকে বললাম, আমার আত্মীয় এসেছে শুটিং দেখতে। তখন তিনি আমার আত্মীয়কে কাছে নিয়ে ছবি তুললেন। অনেক গল্প করলেন আমাদের সঙ্গে। কিছুক্ষণ পর তিনি কথা বলতে বলতে আমার কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতে লাগলেন।
আমার কয় ছেলে মেয়ে, কে কোথায় থাকে এসব নিয়ে গল্প শুরু করলেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম। টানা ২২ বছর কাজ করি তখন এফডিসিতে। কিন্তু কোনো হিরো এই প্রথম আমার কাঁধে হাত রেখে কথা বলছে। এটা আমার সারা জীবনই মনে থাকবে।’
মন্তব্য চালু নেই