৬ ডিসেম্বর কলারোয়া পাকহানাদার মুক্ত দিবস

৬ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়া পাকহানাদার মুক্ত দিবস। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার জীবন বাজী রেখে নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের স্বাধীন দেশের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এই বিজয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দামাল ছেলেরা কলারোয়াকে পাকহানাদার ও রাজাকার মুক্ত করেন। ১৯৭১ সালের আগুন ঝরা এই দিনে কলারোয়া এলাকা পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। কলারোয়ার আকাশে ওড়ে স্বাধীন দেশের পতাকা। ঐতিহাসিক ও গৌরব ঊজ্জ্বল দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য এবারেও পালিত হচ্ছে কলারোয়া ঊপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায়। সূত্র মতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়ায় ৩৪৩ জন বীর সন্তান অংশ গ্রহন করেন। এর মধ্যে শহীদ হন ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। কলারোয়া অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন, কলারোয়ার তৎকালীন এম,সি,এ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মমতাজ আহম্মদ,ভাষা সৈনিক প্রয়াত শেখ আমানুল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য বি,এম নজরুল ইসলাম, মোসলেম উদ্দীন, প্রয়াত শ্যাঁমাপদ শেঠ, প্রয়াত ইনতাজ আহম্মেদ, মোসলদ্দীন গাইন,তারক ঘোষ,ডাঃ আহম্মদ আলীসহ প্রমুখ। কলারোয়া এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টরের অধীনে। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ পরিচালনা করেন কলারোয়ার দুই বীরমুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দীন ও আব্দুল গফ্ফার।১৯৭১ সালে ৫ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী কলারোয়ায় প্রথম আগমন ঘটে। একটি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী দল পার্শ্ববর্তি শার্শা থানায় নাভারন থেকে পাক সেনাদের বরণ করে কলারোয়ার মাটিতে নিয়ে এসে স্থানীয় ডাকবাংলায় স্বাধীনতার শক্রুদের আশ্রয় দেয়। ৭১ এর ২৮ এপ্রিল প্রথম পাকহানাদারের আক্রমনের শিকার হয় কলারোয়ায় পার্শ্ববর্তী শ্রীপতিপুরের পালপাড়া। ঐদিন দুপুর ১২ টার দিকে পাক হানাদারের আক্রমনে শহীদ হন বৈদ্যনাথ পাল, রঞ্জন পাল, বিমাল পাল সহ নয় জন। তারা সমগ্র পালপাড়া লুন্ঠন করে নারী-পুরুষ, শিশুদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায় । মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সৈয়দ আলী, কার্তিক চন্দ্র, শওকাত হোসেন, আবুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও মাস্টার আব্দুর রউফ প্রমুখ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতাা করেছিলেন এলাকার ২/৩ শত ব্যক্তি। এ পর্যন্ত কলারোয়ার ৮টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। পাক বাহিনীদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত এ সকল শহীদদের সবার নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তবে গণকবরগুলির মধ্যে রয়েছে কলারোয়া হাইস্কুল মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে (৫জন), শ্রীপতিপুরের পাল পাড়া (৯ জন), সোনাবাড়িয়া হিন্দুপাড়া (২জন) ও বামনখালী (২জন)। GonoKabor Photoএছাড়া পার্শ্ববর্তী শার্শা থানার জামতলা নামক স্থানে কলারোয়া উপজেলার পাঁচনল গ্রামের মতিয়ার ও আব্দুর রশিদ সহ অজ্ঞাত ৫ জনের গণকবর দেওয়া হয় বলে জানা যায়। সোনাবাড়িয়ার হিন্দু পাড়া গণকবরে শহীদদের মধ্যে রয়েছেন সোনাবাড়িয়া মঠ মন্দিরের পুরোহিত হাজরা গাঙ্গুলি ও শিবু পোদ্দার বলে এলাকা বাসী জানায়। এ ছাড়া সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে সংগঠিত রক্তক্ষয়ী ওই যুদ্ধে ৬ শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। কলারোয়ায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি বড় ধরনের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধেই ২৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। শহীদ হন ১৭ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর কলারোয়ার সীমান্তবর্তী কাঁকডাঙ্গা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে পাকসেনারা কাঁকডাঙ্গা এলাকার ঘাটি ছাড়তে বাধ্য হয়। এর পরপরই কলারোয়া থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাকসেনারা পালিয়ে যেতে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা কলারোয়াকে মুক্ত করে কলারোয়া থানায় স্বাধীনদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। মুক্ত হয় কলারোয়া মা,মাটি ও মানুষ। শনিবার দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য সকাল ৮ টায় কলারোয়া ফুটবল ময়দান সংলগ্ন গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সকাল ৯ টায় মুক্তিযোদ্ধা-জনতার অংশগ্রহণে কলারোয়া পৌর শহরে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি, সকাল ১০ টায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পাদদেশে আলোচনা সভা, বিকেল ৪ টায় বাউল গান অনুষ্ঠিত হবে। সমগ্র অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন।

এক যুবক আটক:arrest20141030013621
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সন্দেহভাজন এক যুবককে পুলিশ আটক করেছে। থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতি রাতে থানার এএসআই মামুন উপজেলার হেলাতলা মোড় থেকে লোহাকুড়া গ্রামের আব্দুল আলিমের পুত্র সাগর হোসেন (১৯) কে আটক করে। আটককৃত সাগর হোসেন পুলিশ দেখে পালানোর চেষ্টাকলে সন্দেহজনক ভাবে তাকে আটক করে পুলিশ।

প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যানের স্মরণে দোয়া অনুষ্ঠান:
Late Hossen Ali-1কলারোয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সমাজসেবক প্রয়াত হোসেন আলীর স্মরণে দোয়া অনুষ্ঠান শুক্রবার পবিত্র জুম্মা নামাজের পর উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ ও মরহুমের নিজ গ্রাম তুলসীডাঙ্গার মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার পৃথক তিনটি জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যথাক্রমে উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদে মাওলানা গোলাম রসুল শাহী , তুলসীডাঙ্গা উত্তরপাড়া জামে মসজিদে মাওলানা আব্দুর রহমান এবং তুলসীডাঙ্গা উত্তরপাড়া কওমিয়া মাদরাসায় মাওলানা হাবিবুর রহমান। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কলারোয়ার অতি পরিচিত, সদাহাস্যোজ্জ্বল, সদালাপী কলারোয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে খ্যাত হোসেন চেয়ারম্যান। তিনি কলারোয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রধান শিক্ষক রাশেদুল হাসান কামরুলের শ্বশুর।

ফেনসিডিল ও মোটর সাইকেলসহ ২ যুবক আটক:
Kalaroa pic-05কলারোয়ার চান্দুড়িয়া বিওপি’র জোয়ানরা অভিযান চালিয়ে ১৬৪ বোতল ফেনসিডিল, ১টি মোটর সাইকেলসহ ২ যুবককে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তবর্তী কাদপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে এই আটকের ঘটনা ঘটে। চান্দুড়িয়া বিওপির নায়েব সুবেদার আব্দুল মান্নান শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাদপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার জনৈক শাহ জামালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিজিবি সদস্যরা একটি মোটর সাইকেলে অভিনব কায়দায় ফেনসিডিল স্থাপনকালে হাতেনাতে ধরে ফেলেন ২ যুবককে। তবে জামাল হোসেন নামের অপর একজন পালিয়ে যায়। এসময় মোটরসাইকেলে স্থাপন করা ১৬৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার ও আটক করা হয় ফেনসিডিলবাহী মোটর সাইকেলটি। আটককৃতরা হলো: উপজেলার সীমান্তবর্তী রামভদ্রপুর গ্রামের দেলোয়ার গাজীর ছেলে আকবর আলি(৩০) ও কাদপুর গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে সাঈদ(১৮)। বিজিবি সূত্রমতে, মোটর সাইকেলসহ উদ্ধারকৃত ফেনসিডিলের আনুমানিক মূল্য ২ লাখ ১৫ হাজার ৬শ’ টাকা।



মন্তব্য চালু নেই