সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশের আগুন : দেশজুড়ে তোলপাড়

গাইবান্ধা সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশের আগুন দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আলজাজিরায় একটি ভিডিজ ফুটেজসহ সংবাদ পরিবেশন হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগুন লাগানোর ঘটনাটি ভালো চোখেও দেখছে না সাবেক পুলিশ প্রধানরাও। পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীরাও এ বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি তোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক জানান, কোনো ব্যক্তিই কারো বসতবাড়ি এমনকি কোনো কিছুতেই আগুন লাগাতে পারে না। আগুন লাগানো একটি ফৌজদারি অপরাধ। সেখানে পুলিশের দায়িত্ব অপরাধ প্রতিহত করা। কিন্তু তারাই যদি নিজহাতে অন্যার বসতবাড়িতে আগুন দেয় তাহলে তাদের অবশ্যই ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের উপস্থিতিতেও কেউ আগুন লাগাতে পারে না। সেক্ষেত্রে এটাও একটি অপরাধ।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবার বিচারের দাবি তুলে তিনি বলেন, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সাঁওতালদের সম্পত্তি রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। সংবিধানও একই কথা বলে। কিন্তু তাদের ওপর হামলা, ঘরবাড়িতে আগুন ও গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা খুবই অন্যায় ও ন্যাক্কারজনক যা সহজে মেনে নেওয়া যায় না।

‘সাঁওতালদের অধিগ্রহণ করা জমি চিনিকল কর্তৃপক্ষ শর্ত ভঙ্গ করে অনেকের নামে লিজ দিয়েছেন। তারা যদি জমি লিজ গ্রহণ করতে পারেন তবে সেই জমি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাঁওতালরা কেন পাবেন না? সাঁওতালদের ওপর হামলা ও উচ্ছেদের ঘটনায় সরেজমিন তদন্ত করে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন সরকার ও সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে।’

মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাঁওতালদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলা হয়েছে। তারা ভীত। তারপরও তারা অনেক কথা বলেছেন। তাদের কথাগুলো আমাদের তদন্তে অনেক সহায়ক হবে।

পুলিশের আগুনের বিষয়ে সাবেক আইজিপি মোদাব্বীর চৌধুরী টেলিফোনে বলেন, ‘আলজাজিরার ওই প্রতিবেদন চোখে পড়েনি। তবে পুলিশ কারো বসতবাড়িতে আগুন ধরাতে পারে না। এমনকি তাদের উপস্থিতিতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটা অনুচিত। যদি প্রকৃত এ ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।’

আলজাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমিতে গড়ে ওঠা সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয় পুলিশ। মাহের সাত্তারের করা ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই প্রতিবেদনে ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, একজন পুলশ ও গোলাপী টি শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি সাঁওতালদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাঁওতাল আদিসীরা গত মাসে তাদের জমি ফিরে পেতে আন্দোলনে নেমেছিল, আর এ মাসে তাদেরকে গাছতলায় বাস করতে হচ্ছে।

প্রতিবেদনে পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, সাঁওতালরা তীর-ধনুক নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা করে। ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়, একজন পুলিশ ও সাদা পোশাকের দুই ব্যক্তি সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে ওই ঘটনায় ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চোখে রাবার বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন দ্বিজেন টুডুর সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়।

জানা গেছে, আলজাজিরার ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। দিনভর বিষয়টি ছিল সবার মুখে মুখেই। এ ঘটনার পর গাইবান্ধা জেলার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক একটি বক্তব্যে দেবে। এ কারণে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না।

জানতে চেয়ে একাধিকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন রিসিভ করা ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন, মন্ত্রী মহাদয় ব্যস্ত আছেন। তিনি এখন কথা বলতে পারবেন না।



মন্তব্য চালু নেই