ইভিএমে ভারতই ইসির ভরসা!
নানা তর্ক বিতর্কের পর পরীক্ষামূলকভাবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু চার বছর আগে এই যন্ত্রের ব্যবহার শুরুর পর থেকেই নানা কারিগরি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে চুক্তি হলেও তাদের সহযোগিতা না পাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে দ্বন্দ্ব। তাই এবার নিজস্ব আইটি বিশেষজ্ঞ দিয়ে ইভিএম তৈরি করতে চায় ইসি। এক্ষেত্রে ভারতের নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা নেয়া হবে।
ইসির বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ইভিএম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ভারতে সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই ভারতের আদলেই ইভিএম তৈরি করতে চান তারা। এ লক্ষ্যে ইসির আইটি শাখার একটি প্রতিনিধি দল খুব শিগগিরই প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠানো হবে।
নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুততর ও নির্ভুল করতে বুয়েটের সহযোগিতায় ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে একটি ওয়ার্ডে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করে ইসি। গাজীপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি এতে সহায়তা দেয়।
কিন্তু ইভিএমটি ভালোভাবে সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হয়। অনেকবার ভোটগ্রহণের সময় অকেজো হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগাদা দিলেও সমস্যাগুলো ঠিক করা হয়নি। এ নিয়ে বুয়েটের প্রতিনিধির সঙ্গে ইসি বেশ কয়েকবার বৈঠকও করেছে।
ইসি সূত্র বলছে, যখন ইসির সঙ্গে চুক্তি হয় তখন বুয়েটের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক লুৎফুল কবির। কিন্তু বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন। এ কারণেই মূলত ইসির সঙ্গে বুয়েটের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
এদিকে সমস্যার সমাধান না পেয়ে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ইসি। শুধু ইউনিয়ন পরিষদে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়। সে লক্ষ্যেই বিধিমালার সংশোধন করে ইসি।
সেময় নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেছিলেন, ‘ইভিএমের বিদ্যমান ত্রুটি শতভাগ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের কথা ভাবছি না।’
ইভিএম প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে যেসব ইভিএম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু ইভিএমে সমস্যা দেখা দিলেও বুয়েটের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে ইসির আইটি বিশেষজ্ঞরা এখনো সেগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে।’
তিনি বলেন, ‘চিন্তা করছি একটা গ্রুপকে ভারতে পাঠাবো। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। তারা প্রশিক্ষণ দিতে রাজিও আছে। ইসির আইটি এক্সপার্টরা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আরো উন্নত প্রযুক্তিতে নিজেরাই যেন এই ইভিএম মেশিন তৈরি করতে পারে। ইসি এমনটায় চিন্তা ভাবনা করছে।’
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে চিন্তা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি। প্রযুক্তিকে অস্বীকার করে চলতে পারবো না। প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে আমাদের যেতেই হবে। তবে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে স্টেক হোল্ডার, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সেই সঙ্গে মানুষের আস্থা অর্জন করাটাও জরুরি।’
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত সার্ভার সিংক্রোনাইজড ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনটি দেখেছে। তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে ইসি। শুধু সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি নয় দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠান ইভিএম তৈরি করলে তাদের সাধুবাদ জানাবে ইসি।
সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির তৈরি ইভিএম প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘তাদের তৈরি ইভিএমটি প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ অন্য কমিশনার ও কর্মকর্তারা দেখেছেন। তারা যে ইভিএমটি তৈরি করেছে সেটি এখনো নির্বাচনে ব্যবহার উপযোগী নয়। তবে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদি সেভাবে তৈরি করে সেটা পুনরায় কশিমন দেখবে।’
সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক চৌধুরী মোকাম্মেল ওয়াহিদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাদের ইভিএমটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আরো কিছু বিষয় বাদ ও যুক্ত করে আগামীতে ইসিতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ভোট গণনার সময় রাজশাহীর একটি কেন্দ্রে ইভিএম বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোটাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ভোট কেন্দ্র ঘেরাও করে। পরে ওই কেন্দ্র পুনরায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
ইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ইসিতে ১২শর মতো ইভিএম রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহায়তায় প্রথমে ১৩০টি, দ্বিতীয় পর্যায় ৪০০টি এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সহযোগিতায় আরও ৭০০ ইভিএম কমিশনে যুক্ত হয়।
মন্তব্য চালু নেই