‘কিরণমালা’ সিরিয়াল শেষ হওয়াতে সারাদেশে আনন্দের বন্যা
অবশেষে শেষ হলো ওপার বাংলার বহু বিতর্কিত ধারাবাহিক ‘কিরণমালা’ । এই ধারাবাহিক শেষ হওয়ায় বাংলাদেশে এক প্রকার আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিরণমালা শেষ হওয়ায় সবাইকে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। টানা ২ বছর ৩ মাস ধরে চলা এই ধারাবাহিককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বহু রক্তারক্তি-দাঙ্গাহাঙ্গামায়র ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস করে ঝরেয়ে গেছে অনেক প্রাণ। সহজ সরল গ্রামবাসীদের কিরণমালার নেশা মাথা এতোটাই ভোঁতা করে দিয়েছিলো যে তারা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটিয়েছে। মারা নিজেদের শিশু সন্তানটিকেও আগুনে পুড়ে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে।
কিরণমালা শেষ হওয়ায় ফেসবুকে হাসান ইমন নামে একজন লিখেছিল, যেই শুনেছি গতকাল কিরণমালা সিরিয়াল শেষ, মনে হচ্ছে আমার থেকে খুশি আর কেউ হয়নি। আহহহহা কি আনন্দ আকাশে বাতাশে . .
স্নিগ্ধা নামে একজন লিখেছে, উফফফফ ! স্ব:স্তি পেলাম ,,, বাংলাদেশের জঘন্যতম টিভি-সিরিয়াল নামক সংবিধান থেকে একটি জঘন্যতম কিরণমালা নামক সংবিধানের সমাপ্তি ঘটলো ॥
নিরব নামে একজন লিখেছে, আলহামদুলিল্লাহ। ভারতীয় সিরিয়াল কিরণমালা শেষ।
এমনি হাজারো পোস্টে ভরে আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে কিরণমালা শেষ হওয়াতে যারা খুশি হয়েছে তাদের সাবধান করে তারা লেখিছে কিরণমালার পর স্টারজলসা কর্তৃপক্ষ তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখে নতুন কোন মেগা সিরিয়াল হাজির হবে।
এক নজরে কিরণমালার জন্য ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনা গুলো।
১৬ পরিবার নিঃস্ব:
২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর বড়দাপ (সরকারপাড়া) গ্রামে কিরণমালা সিরিয়ালটি দেখতে গিয়ে ১৬টি পরিবারের বসতবাড়ি-জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। জানা যায়, ওইদিন রাত ৮.৪০ মিনিটে বাড়িতে সবাই ‘কিরণমালা’ সিরিয়াল দেখার সময় চুলার আগুন ফুসকে রান্নাঘরে আগুন লাগে।
এরপর তা আশপারের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও মালামাল কিছুই রক্ষা করা যায়নি।
পানিতে ভাসে ২ শিশুর নিথর দেহ:
কিরণমালার সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। উপজেলার বাদুড়িয়া গ্রামের সবুর মোল্লা নামের এক পরিবারের সবাই একত্রে দেখছিলেন কিরণমালা। একই সময় পুকুর পাড়ে খেলা করছিলেন সবুর মোল্লার ছেলে আসাদুর রহমান (৬) ও তার চাচাতো বোন মনিরা খাতুন (৪)। একপর্যায়ে সবার অগোচরে শিশু দুটি পুকুরে পড়ে যায়। যখন সিরিয়াল শেষ হয় ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে যায় অবুঝ শিশু দুটি। পরিবারের সদস্যরা দেখেন পুকুরের পানিতে ভাসছে দুটি নিথর দেহ। দুই সন্তানকে হারিয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো বাড়িতে।
ঘরের ভেতরে পুড়ে অঙ্গার তালাবদ্ধ মেয়ে:
কিরণমালা দেখতে গিয়ে আরেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে কুষ্টিয়ার খোকসায়। উপজেলার চকহরিপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী শোকেলা খাতুন বাড়ির পাশের দোকানে দলবেঁধে কিরণমালা দেখতে যান। স্টার জলসার এই সিরিয়ালের প্রতি এতটাই নেশা ছিল তার যে দুই শিশু কন্যাকে ঘরে ঘুম পাড়িয়ে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেন তিনি। এরই মাঝে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন ধরে তা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বড় মেয়ে সায়মা (১০) ঘরের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসতে হলেও আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয় ছোট মেয়ে ঋতু (৭)। কিরণমালায় মগ্ন থাকা মা খবর পেয়ে যখন বাড়িতে পৌছান তখন দেখেন সব শেষ।
বোনের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা:
কিরণমালা দেখা নিয়ে ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াবাড়ি এলাকায় চিত্তরঞ্জন সাহার দুই কন্যার মধ্যে ঝগড়া হয়। এটা এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে এক পর্যায়ে বড় বোন সঞ্জিতা সাহা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
মন্তব্য চালু নেই