প্রভাবশালীদের ব্যাংক হিসাব নজরদারিতে থাকবে

এখন থেকে প্রভাবশালীদের ব্যাংক হিসাব খোলা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নজরদারি করবে।

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিলের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএফআইইউ এর সার্কুলারে অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রভাবশালী বলতে কাদের বোঝানো হবে সে সংজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করবে।

মঙ্গলবার দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিলের বৈঠক অনুুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অ্যাটর্নী জেনারেল, অর্থসচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবসহ আইন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর অন্তর্ভূক্ত তদন্ত ও বিচার সম্পর্কিত ধারাগুলোর সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মানিল্ডারিং সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে দুদকের পাশাপাশি পুলিশকেও অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেছে। পুলিশকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা না হলে আন্তর্জাতিক সংস্থায় সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

পুলিশের পক্ষ হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলোচিত আইন সংশোধন করে মুদ্রাপাচার বিষয়ে তদন্ত, প্রেফতার ও মামলা করার ক্ষমতা দুদকের পাশাপাশি পুলিশের হাতে দেওয়ার সুপারিশ করে।

অন্যদিকে, দুদক আইনটি সংশোধনে বিপক্ষে অবস্থান নেয়। দুদকের যুক্তি হচ্ছে, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’ -এ মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় তদন্ত ও মামলা করার দ্বায়িত্ব এককভাবে দুদককে দেওয়া হয়েছে। দুদক এ বিষয়ে বেশ খানিকটা সাফল্যে দেখিয়েছে। এখন যদি আইনটি সংশোধন করে অন্য কাউকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে দুদকের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যাবে।

এর আগে গত মাসে এ বিষয়ে একটি নিস্পত্তিতে পৌঁছানোর জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড.এম আসলাম আলম। তবে বৈঠকে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন বিষয়ে কোনো নিস্পত্তি পৌছানো সম্ভব হয়নি। নিস্পত্তির ভার দেওয়া হয় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিলকে।

বৈঠকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের তিনটি ধারা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এই ধারাগুলো হল-৯, ১২, ১৪ ও ২৩।

আইনের ৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে,‘ (১) অন্য আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ৫ নং আইন) এর অধীন তফসিলভুক্ত অপরাধ গণ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন বা কমিশন হইতে তদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিশনের কোন কর্মকর্তা বা দুর্নীতি দমন কমিশন হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত যোগ্য হইবে।

(২) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ ক্রিমিনাল ল’ (১৯৫৮) এর অধীন নিযুক্ত স্পেশাল জজ কর্তৃক বিচার্য হইবে।

(৩) অভিযুক্ত ব্যক্তির সম্পত্তি অনুসন্ধান ও সনাক্তকরণের নিমিত্ত দুর্নীতি দমন কমিশন এই আইনের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ৫ নং আইন) -এ প্রদত্ত ক্ষমতাও প্রয়োগ করিতে পারিবে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তা এই আইনের পাশাপাশি অন্য আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাও প্রয়োগ করিতে পারিবে।’

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে, (১) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারার্থ আমলে গ্রহণ (কগনিজেন্স) করিবেন না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই দুই ধারার সংশোধনের পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমান আইনে মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত ও মামলা দায়েরের ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে দুদকের হাতে ন্যস্ত রয়েছে।

এর ফলে সীমিত জনবল নিয়ে দুদকের পক্ষে মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে অনেক অভিযোগ চূড়ান্ত নিস্পত্তিও করা যাচ্ছে না। তাই আইনটি সংশোধন করে দুদকের পাশাপাশি পুলিশকেও মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত ঘটনা তদন্ত, প্রেফতার ও মামলা দায়েরের ক্ষমতা অর্পন করা হোক।

এটি দেয়া হলে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী আইন সংশোধন করা হলে মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ তদন্ত করা বা সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেফতার ও মামলা করার জন্য পুলিশকে আর দুদকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পরবে না।

সূত্র জানায়, দুদক বরাবরের মতই আইনটি সংশোধনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় উভয় পক্ষকে তদন্তসহ মামলার অন্যান্য বিষয়ে সম্পৃক্ত করা যায় কিনা তা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী বৈঠকে অবহিত করেন।

এছাড়া আইনটি সংশোধন করে তাতে পুলিশের অংশগ্রহন নিশ্চিত হলে তারা মামলার তদন্ত করে তা দুদককে দেবে। দুদক তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলেও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ‘মানিল্ডারিং বা মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইন ২০১২তে ‘সম্পৃক্ত অপরাধের তালিকায় ২৮টি অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,‘ উল্লিখিত অপরাধ, যা দেশে বা দেশের বাইরে সংঘটনের মাধ্যমে অর্জিত কোন অর্থ বা সম্পদ লন্ডারিং করা বা করবার চেষ্টা করা হয়।

এ অপরাধের মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতি ও ঘুষ, মুদ্র জালকরণ, দলিল দস্তাবেজ জালকরণ, চাঁদাবাজি প্রতারণা, জালিয়াতি,অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, অবৈধ মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা, অপহরণ, অবৈধভাবে আটকিয়ে রাখা ও পণবন্দী করা, খুন, মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি, নারী ও শিশু পাচার, চোরাকারবার , দেশী ও বিদেশী মুদ্রা পাচার, চুরি বা ডাকাতি বা দস্যুতা বা জলদস্যুতা বা বিমান দস্যুতা, মানব পাচার, যৌতুক, চোরাচালানী, শুল্ক ও কর সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

সূত্র জানায়, স্মাগলিং অব মাইগ্র্যান্ট নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আপাততঃ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার। কারন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র ছাড়া অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা সমস্যায় পড়তে পারেন।



মন্তব্য চালু নেই