বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে ক্যামেরা ট্র্যাপিং
সুন্দরবনে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে ক্যামেরা ট্র্যারাপিংয়ের মাধ্যমে চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে বাঘ মনিটরিং। সময় লাগবে তিন মাস।
এ ছাড়াও প্রজনন ক্ষমতা বাড়িয়ে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে সুন্দরবনে আরো ১৮টি অভয়ারণ্য করা হচ্ছে। সুন্দরবনে ২০১৪ সালে সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ১০৬টি।
সুন্দরবন বিভাগের সূত্র জানায়, সর্বশেষ শুমারিতে সন্তুষ্ট নন বিশেষজ্ঞরা। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ও বনবিভাগের যৌথ এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, বনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বনবিভাগের দায়িত্বহীনতা, বাঘের প্রতি উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিকারিদের অপতৎপরতার কারণে বাঘ হারিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন বাঘ রক্ষায় বনবিভাগের পাশাপাশি র্যা ব, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আগামী ১৩ নভেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী আলোর কোলের রাশ মেলায় বন্যপ্রাণী নিধনের অপতৎপরতারোধে বনবিভাগ, র্যাব, নেভি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বিজিবিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বাঘ মনিটরিংয়ের জন্য দুজন আমেরিকান বিশেষজ্ঞ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। গ্যারি এফ কলিন্স ও ক্যাথি ওয়াচয়ালা আমেরিকান বিশেষজ্ঞ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।
ওয়াশিংটন ডিসির কনজার্ভেশন বায়োলজি ইনস্টিটিউশন থেকে এ দুই বিশেষজ্ঞ আসছেন। বনবিভাগের সুন্দরবন সার্কেলের বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহম্মেদ বেঙ্গল টাইগার কনজারভেশন এ্যাক্টিভিটি-বাঘ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রকল্প পরিচালক জহির উদ্দিন আহমদ জানান, ২০২২ সালের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞরা বাঘের খাদ্য, আবাসস্থল, প্রজনন, শিকারিদের তৎপরতা ইত্যাদি বিষয়ে মনিটরিং করবেন। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি আশাবাদী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়বে।
সুন্দরবন (পশ্চিম) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদ আলীর দেওয়া তথ্য মতে, মধ্য নভেম্বর থেকে ক্যামেরা ট্রাফিংয়ের কাজ শুরু হবে। শেষ করতে তিন মাস লাগবে। বন এলাকায় প্রায় ৩০০ ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। তিনিও আশাবাদী- বাঘের সংখ্যা বাড়ার সুসংবাদটি বিশ্ববাসীকে আগামী বছর জানাতে পারবেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সুন্দরবন থেকে পাচার হওয়া তিনটি বাঘের শাবক আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী রাজধানীর শ্যামলী থেকে উদ্ধার করে। পরে শাবকগুলো ডুলহাজরা সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হয়।
সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালের আগস্ট মাসে মোংলা এলাকার শিকারি দলের সদস্য জামাল উদ্দিন সাতক্ষীরায় বাঘের চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। শিকারি দল ২০১০ ও ২০১১ সালে বেশ তৎপর ছিল। সুন্দরবনের দু’অংশে বাঘ ও হরিণ শিকারে ৭৫ গ্রুপ তৎপর।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক জানান, শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর, ভেটখালী ও কৈখালী এলাকায় ৮০ জন হরিণ শিকারির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। বন বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী ট্যাংরাখালী গ্রামের মান্দার গাজী ও কালেঞ্চী গ্রামের নুরুল ইসলাম বাঘের চামড়া, হাড় ও নখ পাচারের সঙ্গে জড়িত।
মৌয়ালদের সূত্র সুন্দরবন বিভাগকে অবহিত করেছে কটকা, কচিখালী ও নীলকমল ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বাঘের বাচ্চা দেখা গেছে। প্রত্যেকটি বাঘিনীর কোলে গড়ে দুটি করে বাচ্চা মৌয়ালরা দেখতে পেয়েছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর নাজমুস সাদাত অভয়ারণ্য গড়ে তোলার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, অভয়ারণ্যের পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে বনবিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
মন্তব্য চালু নেই