দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত
চলে যাচ্ছে হেমন্ত। আসছে শীত। রাত বাড়ার সাথে সাথে আবহাওয়া জানান দেয় দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত।
ইটপাথরে ঘেরা এ যান্ত্রিক শহরে হয়ত শীতের আগমনকে বোঝা যায় না। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে শীতের আবহটা বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। রাতে ঠাণ্ডা, আর সকালে কুয়াশায় ভিজছে মাঠের ঘাস, গাছপালা। দিনের থেকে তাপমাত্রাও হ্রাস পাচ্ছে রাতের বেলা।
পিপীলিকারা ব্যস্ত শীতের অন্ন মজুদ করতে। পাখিরাও শীতের আশ্রয় খুঁজছে। লোকজনও প্রস্তুত হচ্ছে শীতকে বরণ করে নিতে।
গ্রামে শীত এলেই অন্য এক পরিবেশ তৈরি হয়। সকালে চাঁদর গায়ে দিয়ে বেড়াঁনো, উঠানে খড়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ আর গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া আহ!- কতই না মিষ্টি। সেই সঙ্গে খেজুরের রস বাড়িয়ে দেয় অন্যরকম দোলা।
গাছিরা ভোরে সূর্য উঠার আগেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। সেই রস দিয়ে তৈরি খেজুরর গুড় বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেজুরের গুড় ছাড়া শীতকালে পিঠা-পায়েশ তৈরির কথা ভাবাই যায় না। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে খেজুরগুড় তৈরির ধুম পড়ে যায়।
শীত এলেই ঘরে ঘরে সুস্বাদু পিঠার উৎসব শুরু হয়ে যায়। কুয়াশা মোড়ানো শীতের হিমেল হাওয়ায় ধোয়া উঠা ভাঁপা পিঠার স্বাদ না নিলে যেন অতৃপ্তি মেটে না। গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে তাই শীত এলেই পিঠা তৈরি ও খাওয়ার ধুম লেগে যায়।
পিঠা বাঙালির ঐতিহ্য। পরিবার পরিজন মিলে পিঠা খাওয়া, আত্বীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠানো যেনো এক উৎসবে পরিণত হয়। গ্রামাঞ্চলে শীতে যেমন বাহারি পিঠা হয় তেমনি বাহারি তার নাম।
গ্রাম-বাংলার কিছু পিঠা হচ্ছে- নকশি পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, ডিম চিতই পিঠা, দোল পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, পাকান, আন্দশা, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল পিঠা, চুটকি পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, পাতা পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, তেল পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসপ্তা, নকশি পিঠা, ফুল পিঠা, মাল পোয়া, রস পাকন আরো নাম না জানা হাজারো পিঠা আছে এই বাংলায়।
এর মধ্যে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা এর প্রচলন সবথেকে বেশী। আর কিছুদিন পরেই হয়ত শীত চলে আসবে তার চিরা চরিতো সেই কুয়াশার চাঁদরে মুড়িয়ে। আমরাও অপেক্ষায় থাকি স্বাগত জানাতে।
আসুক তবে রসের মাস, আসুক তবে পিঠা-পুলির মাস। পিঠার উৎসবে জেগে উঠুক গ্রাম বাংলার সেই চেনারুপ। ছড়িয়ে যাক সবার ঘরে ঘরে।
মন্তব্য চালু নেই