চার বছরেও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি ‘বাইব্যাক আইন’

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ার ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। এতে লোকসানে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বাইব্যাক আইন থাকলে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। ২০১২ সালে বাইব্যাক আইনের খসড়া করা হলেও এখনো তা চূড়ান্ত অনুমোদনের উদ্যোগ নেই। ফলে আলোর মুখ দেখছে না আইনটি।

বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাইব্যাক আইন চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন শুরুর ছয় মাসের মধ্যে ইস্যু মূল্যের ২০ শতাংশ কমে গেলে ওই প্রতিষ্ঠান সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে ওই শেয়ার কিনে নিতে হবে।

এছাড়া কোনো কারণে যদি শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে কমে যায় তাও ওই প্রতিষ্ঠানকে কিনে নিতে হবে। আর এটাকেই বাইব্যাক আইন বলা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১১ সালের শুরুর দিকে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর সরকার কোম্পানি আইন সংস্কার করে বাইব্যাক অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১২ সালে আইনটির খসড়া করা হয়। এটি কোম্পানি আইনের অংশ বলে বাইব্যাক মূলত কোম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে কোম্পানি আইন সংশোধন করে বাইব্যাক ধারা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান কোম্পানি আইন সংশোধন করে ৫৮ ধারার পর তিনটি উপধারা সংযোজন করে তা সংসদে পাসের মধ্য দিয়ে বাইব্যাক নিয়ম চালু করা হবে।

বাইব্যাক আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি), রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ (আরজেএসসি), দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মতামত দেয়।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে বাইব্যাক আইনের খসড়া অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হলে এর উদ্যোক্তারা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার বাইব্যাক করে নেন। তাছাড়া এ ধরনের কোম্পানিকে স্টক এক্সচেঞ্জ অবসায়ন ঘোষণা করে অবশিষ্ট সম্পদ আনুপাতিক হারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমান কোম্পানি আইন-১৯৯৪ অনুসারে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

কোম্পানিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কোম্পানি আইপিওতে আসার পর তার শেয়ারদর ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাইব্যাক আইন চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতেন।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, কোম্পানিগুলোর হীনস্বার্থ বাস্তবায়নের হাতিয়ার বাইব্যাক আইন না থাকা। এ আইন হলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোনো টালবাহানা করতে পারবে না। ব্যবসা না করতে পারলে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। বিনিয়োগও অনেকদিন আটকে থাকবে না।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি শীর্ষ ব্রোকারদের বৈঠকে বাইব্যাক আইন বাস্তবায়ন বিষয়ে কথা হয়। কিন্তু এ আইন চালু হলে কোম্পানি অধিক প্রিমিয়াম দাবি করলে সেখানে কিছুটা হলেও বাধা দেবে স্পন্সর এবং ইস্যু ম্যানেজার। কারণ, তারা নিজেরা নিজেদের বিপদ ডেকে আনতে চাইবে না। এতে ভালো কোম্পানি বাজারে আসার সুযোগ পাবে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, আমার মনে হয় বাইব্যাক করানোর চেয়ে ভালো কোম্পানি বাজারে আনা বিশেষ প্রয়োজন। সরকার শেয়ার ছাড়ার কথা থাকলেও তার কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। এছাড়াও দেশে ব্যবসা করছে এমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আনতে পারলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই