ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ছাত্রলীগ নেতাকে অব্যাহতি!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ নিয়ে ‘আপত্তিকর’ স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ এনে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম আলাউদ্দীনকে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আলাউদ্দীনকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘শনিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাঙামাটি জেলা শাখার এক জরুরি সিদ্ধান্তে রাঙামাটি পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম আলাউদ্দিনকে (বানান ভুল) সংগঠনের দলীয় নিয়ম শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য সংগঠনের দায়িত্বরত সকল পদ-পদবি স্থগিত ও সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তার যেকোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ দায়ভার গ্রহণ করবে না।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমার স্বাক্ষর রয়েছে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এই ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, আলাউদ্দীন ফেসবুকে জেলা ছাত্রলীগ নিয়ে আপত্তিকর ও কটূক্তিপূর্ণ কথাবার্তা লিখে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাঁর স্ট্যাটাসগুলো জেলা ছাত্রলীগ শুধু নয়, ছাত্রলীগের সামগ্রিক ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, সংগঠনের স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারে অব্যাহতি পাওয়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম আলাউদ্দীন বলেন, ‘একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে কারণে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা বিরল এবং বিস্ময়কর। আমার স্ট্যাটাস পছন্দ না হলে তাঁরা আমাকে ফোনে বলতে পারতেন, শোকজ করতে পারতেন। দাদাকে (পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার) বিচার দিতে পারতেন। কিন্তু এসব না করে সরাসরি অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে তারা পুরোনো বিরোধের প্রতিশোধই নিয়েছে। এটি গঠনতান্ত্রিকভাবেও তারা পারে না।’
আলাউদ্দীন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘যারা বহিষ্কার করেছে, তারা অতীতে কী কী স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন? তাঁদের ঘনিষ্ঠ সহচররা যখন দলের সিনিয়র নেতাদের অপমান করে ও হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, তখন তারা কোথায় ছিলেন?’
গত ৭ অক্টোবর নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে আলাউদ্দীন লেখেন, ‘আজ বুঝলাম জেলা ছাত্রলীগ কী করতে পারে। আর আজ দেখালাম আমরা কী করতে পারি। অযোগ্যদের হাতে রাজনীতি হয় না। হয় শুধু ফাঁকা গুলি ফুটানো… ঘুমান কোনো সমস্যা নাই।’
এই স্ট্যাটাসের জের ধরেই তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলাউদ্দীন।
২০১৫ সালের ২ জুন রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। সম্মেলনের একদিন পর আবদুল জব্বার সুজনকে সভাপতি, সাইফুল আলম রাশেদ ও এম এন কাওসার রুমিকে সহসভাপতি, প্রকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক, রুবেল চৌধুরীকে যুগ্ম সম্পাদক এবং সালাউদ্দিন টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ছয় সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হলেও এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি।
শনিবার যে সভায় এইচ এম আলাউদ্দীনকে বহিষ্কার করা হয়, সেই সভায় ছয় সদস্যের জেলা কমিটির চারজন উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে সভার একটি সূত্র। সভায় ছিলেন সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন, সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা, যুগ্ম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন টিপু। সভায় ছিলেন না দুই সহসভাপতি সাইফুল আলম রাশেদ ও এম এন কাওসার রুমি।
ক্ষুব্ধ পৌর ছাত্রলীগ
এদিকে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম আলাউদ্দীনকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন পৌর কমিটির নেতাকর্মীরা। পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অপুশ্রীং লেপচা ফেসবুকে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, ‘কারণ কী?… কিসের বিরোধী?… চিঠি কই? লেখার মধ্যে ফ্লুয়েড কেন?… স্থগিত করলা জানাইলা না… কেমনে কী? আমি পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হই। আমি জানলাম না…পৌর ছাত্রলীগের সভাপতির পদ স্থগিত। এটা কোন ধরনের কথা…তীব্র নিন্দা জানাই তোমাদের ভুল সিদ্ধান্তের…।’
অপু বলেন, ‘যারা জেলা কমিটির ছয় সদস্য ঘোষণার এক বছর তিন মাস পার হয়ে যাওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করতে পারেনি, তাদের মুখে সংগঠনের নিয়ম-শৃঙ্খলার কথা মানায় না।’ তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিজে যখন নিজের ফেসবুকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামের বানান ভুল লিখেছিল, তখন কোথায় ছিল জেলা কমিটি? যখন ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাই করা হয়েছিল, তখন ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি কোথায় ছিল? আমি পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, আমাকে কিছুই বলা হলো না, জানানো হলো না, কোনো চিঠিপত্র নাই, শোকজ নাই, হঠাৎ প্রেস রিলিজ দিয়ে আমার সভাপতিকে ‘অব্যাহতি’! এটা কী ধরনের পদক্ষেপ? আমরা সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবহিত করব। তাঁরা নিশ্চয়ই এই বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেবেন। আমরা সকালেই দাদার (দীপঙ্কর তালুকদার) সঙ্গে দেখা করব এবং এই অন্যায়ের প্রতিকার চাইব।’
মন্তব্য চালু নেই