ছাত্রলীগ নেতার ‘জঙ্গি’ নৃশংসতা

ছাত্রলীগের এক নেতা আবারও নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। তার নাম বদরুল ইসলাম। সে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সম্পাদক।

সোমবার ছাত্রলীগ নেতা বদরুল চাপাতি দিয়ে নৃসংশভাবে কুপিয়ে আহত করে সিলেট মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে। আহত নার্গিস ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বদরুলের ওপর জঙ্গিদের প্রভাব স্পষ্ট। সে যেভাবে চাপাতির ব্যবহার করেছে সেটা সমাজের জন্য যথেষ্ট আশঙ্কার কারণ।

সোমবার বিকালে সিলেট এমসি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আসার সময় নার্গিসের ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা চালায় বদরুল। কোপে তার মাথায় এবং হাতে মারাত্মকভাবে আঘাত লাগে। ঘটনাস্থল থেকে একুট দূরে দাড়িয়ে নৃশংস এ ঘটনার ভিডিও করে সেখানে উপস্থিত লোকজন। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় মাটিয়ে লুটিয়ে পড়া নার্গিসকে বদরুল কুপিয়েই যাচ্ছেন।

সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্ত্যক্ত করার ধরন বদলে এধরনের কোপানো গত মে মাসের দিক থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটা বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে সমাজে।

এদিকে বদরুলকে আটক করেছে শাহপরান থানা পুলিশ। সে ঘটনাস্থলে গণপিটুনিতে আহত হওয়ায় বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন সিলেটের (দক্ষিণ)অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিজান আল মুসা।

অতিরিক্ত এই উপকমিশনার বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, নার্গিসদের বাড়িতে লজিং থাকতেন শাবি ছাত্রলীগের নেতা বদরুল। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে বদরুল দাবি করেছে। সম্প্রতি নার্গিস তাকে প্রত্যাখ্যন করলে সে এই সিদ্ধান্ত নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় লোকজন ছুটে আসতে দেখে বদরুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে ধরে গণপিটুনি দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে জনতার হাত থেকে হামলাকারীকে উদ্ধার করে। গুরুতর আহত অবস্থায় নার্গিসকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় লোকজন। তাকে সোমবারই গভীর রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

সোমবার বিকালে পরীক্ষা দিয়ে নার্গিস বের হওয়ার পর এমসি কলেজ মসজিদের পেছনে পুকুর পাড়ে তাকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর দৃশ্য দূর থেকে ভিডিও ধারণ করলেও কেউ এগিয়ে যায়নি।

পুলিশ জানায়, তারা ভিডিওটি দেখেছেন এবং কোপানোর ধরন দেখে বোঝা যায় হত্যা করাই উদ্দেশ্যেই কোপানো হচ্ছে।

ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী একজনের মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সোমবার রাতেই প্রকাশ পেয়েছে। ঘটনার সময় কয়েকজন যুবক এগিয়ে গেলেও আবার দৌড়ে পালিয়ে আসতে দেখা গেছে। এসময় ভিডিও ধারণকারী নারী কণ্ঠে শুধু ‘ও মাই গড ….ও মাই গড’ বলতে শোনা যায় এবং ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, হামলাকারীকে আটক করে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সপোর্দ করে।

সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন বলেন, ‘আমাদের আক্রমণের ধরনও বদলে গেছে। জঙ্গিদের কোপানোর একের পর এক ঘটনার প্রভাব তো সমাজে পড়বেই। এই মানসিকতা থেকে এখন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলেও ওই চাপাতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সমাজ। এটি ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আগে বিচারের দিকটি নিশ্চিত করা ‍খুবই জরুরি।’

গত মে মাসে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার বান্ধবীকে নিয়ে প্রাইভেট থেকে ফেরার পথে কোপানোর ঘটনা উল্লেখ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী বলেন, ‘বখাটেদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা বদলে যাচ্ছে। একসময় কেবল মৌখিকভাবে উত্যক্ত করা হতো।

পরবর্তীতে সেটা এসিড সন্ত্রাসে রূপ নিয়ে। এখন কোপানোর জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। সমাজ যে বিষয়গুলোর মধ্য দিয়ে যাবে তার প্রভাব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। উপযুক্ত শাস্তি এবং অবশ্যই তা যত কম সময়ে সম্ভব হয়- এ দুয়ের বাইরে কোনও সমাধান আপাতত নেই।’খবর বাংলা ট্রিবিউনের।



মন্তব্য চালু নেই