যে কারণে তিনি আজ শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক
যশোর কালেক্টরেট ভবনের সিঁড়ির কাঠের রেলিং ধরে দোতলায় উঠার চেষ্টা করছিলেন এক বৃদ্ধা। উদ্দেশ্য চিকিৎসার্থে কর্তাদের কাছ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা নেওয়া। কিন্তু বয়সের ভারে শরীরে কাঁপন আসায় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেন না তিনি। বসে পড়লেন সেই সিঁড়ির ওপর।
এ সময় সিঁড়ি দিয়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্রুত কর্মকক্ষে ঢুকছিলেন। কিন্তু কারো নজরে পড়েনি অসহায় এই বৃদ্ধাকে। তবে, চোখ এড়ায়নি একজনের। তিনি যশোরের জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবীর। যিনি নিজ কর্মগুণে ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে সেবার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) অফিসে ওঠার সময় সিঁড়ির নিচে ওই বৃদ্ধাকে দেখতে পেয়ে তার হাত ধরে একটা কক্ষে নিয়ে যান জেলা প্রশাসক। এছাড়াও তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেন। পরে যখন ওই বৃদ্ধা অন্যদের মুখে শুনলেন, উপকারকারী ওই লোকটি আর কেউ নন খোদ জেলা প্রশাসনের সবচেয়ে বড় কর্তা ড. মো. হুমায়ুন কবীর। তখন তিনি অবাক হয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলেন।
এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি ‘কেউ খোঁজ রাখেনি সড়কটির কথা’ শিরোনামে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যশোর-রাজগঞ্জ সড়কের সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকার একটি ব্রিজ ও মণিরামপুরের হেলাঞ্চি এলাকার আরেকটি ব্রিজের ভগ্নদশার সচিত্র ছবি পোস্ট করেন। যা জেলা প্রশাসকের চোখে পড়া মাত্রই তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পারভেজ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে ধুলাবালির ওপরে বসে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সমস্যার কথা শুনে ওই দিনই এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে ব্রিজ দুইটি সংস্কার করার নির্দেশ দেন।
ফেসবুকে একই ব্যক্তি মণিরামপুরের ‘রোহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের বেহালদশা’ শিরোনামে পোস্ট দিয়ে লেখেন, ঝুঁকিতে আছে বিদ্যালয়ের ভবনটি। প্রতিদিন ছাদ ভেঙে ইটের টুকরা পড়ছে মেঝেতে। আর এই ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা। যেকোনো মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পোস্টটি জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবীরের নজরে এলে জরুরিভাবে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে জানানোর জন্য মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি।
এরআগে, বাঘারপাড়া উপজেলার বলরামপুর গ্রামের মুদি দোকানি সমির বিশ্বাসের মেয়ে কেয়ার কষ্টমাখা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে এইচএসসিতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত অনুদানের টাকায় কলেজে ভর্তি হয়ে এখন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ রচনা করছেন কেয়া।
দুই বছর তিন মাস যশোরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ড. হুমায়ুন কবীর মানবসেবার এমন অসংখ্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে সাধারণ মানুষের দোড়গড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন। মাস দুয়েক আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে দেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। পুরস্কার নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে।
জেলার শিক্ষারমান উন্নয়ন ও শিশু শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এজন্য সম্প্রতি ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ’ উপলক্ষে তাকে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত করা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই