১২ যান মালিককে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ইসি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্ক কম হয়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার একবছর গড়াতে চললেও বিতর্ক এখনো থেমে নেই। সম্প্রতি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের করা মন্তব্য যেন বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন।
এইচটি ইমামের বক্তব্য যখন সব মহলে সরব আলোচনা চলছে, ঠিক তখই জানা গেলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বরত ক্ষতিগ্রস্ত ১২ যানবাহন মালিককে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগেও ইসি নির্বাচন সহিংসতায় শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তিনশতাধিক ব্যক্তিকে প্রায় এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
ইসি সূত্র বলছে- বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর জেলার ১২ যানবাহন মালিককে অর্ধকোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার লক্ষ্যে ইসির বাজেট শাখা ইতোমধ্যে একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। সে তালিকা কমিশনে উত্থাপন করার জন্য পাঠানো হয়েছে। কমিশন অনুমোদন দিলেই ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেয়ার মূল প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ওই চার জেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও নরসিংদী জেলার ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন মালিকদেরও ক্ষতিপূরণ দেবে ইসি। তবে তারা এখনো চূড়ান্ত কাগজপত্র ইসিতে পাঠাতে পারেনি। এ কারণে তাদের ক্ষতিপূরণ পরে দেয়া হতে পারে।
সূত্র আরো বলছে, নির্বাচন হওয়া জেলাগুলোর দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসারদের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন বাবদ ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করেন যানবাহন মালিকরা। পরে রিটার্নিং অফিসাররা ওইসব আবেদনসহ যানবাহনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটিরও বেশি টাকা চেয়ে ইসির কাছে আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম আবেদন পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট শাখাকে তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে কমিশনে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন প্রায় অর্ধশত গাড়িতে আগুন দেয় নির্বাচন বর্জনকারীরা। এছাড়াও বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুর চালানো হয়। তবে ইসি সব যানবাহন মালিককে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। শুধুমাত্র যেসব ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির বৈধ কাগজপত্র আছে তাদেরই শুধু ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য ইসি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সহযোগিতা নিয়েছে।
ক্ষতিপূরণ যানবাহনের মধ্যে বেশিরভাগই রয়েছে ট্রাক, পিক-আপ, বাস, মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা। মূলত এসব গাড়ি নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসন কর্তৃক রিক্যুইজেশন করাছিল।
এদিকে একটি মহল বলছে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছিল একটি বিতর্কিত নির্বাচন। এ নির্বাচনে ১৫৩ প্রার্থী বিনাপ্রতিন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ কারণে এখন পর্যন্ত ওই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই সরকারের ইশারায় নির্বাচন কমিশন ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে এখনো সমালোচনা চলছে। সেই সমালোচনা ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে সরকারের ইশারায় ইসি নির্বাচনের এক বছরের মাথায় ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে যাচ্ছে।’
তবে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমার কাছে এখনো এমন কোনো ফাইল আসেনি। তাই এ বিষয়ে এখনোই কিছু বলতে পারবো না।’
উল্লেখ্য, বিএনপিকে ছাড়াই গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেকেরও বেশি এমপি নির্বাচিত হলেও সহিংসতার মাত্রা ছিল ভয়ঙ্কর। বিরোধী দলের নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা আর নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও মনোনীত প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থনে তিন শতাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আহত হন। নিহত হন ৭ জন। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ২ জন, আনসারের ১ জন, পুলিশের ১ জন ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ৩ জন নিহত হন।
ইতোমধ্যে নিহত পরিবারকে সাড়ে পাঁচ লাখ করে টাকা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৩২২ জনের মধ্যে ছিল পুলিশের ১০৯ জন, আনসারের ৫৬ জন এবং সেনাবাহিনীর ২৪ জন, বাকিরা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।
নির্বাচনের মাসখানেক পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার লক্ষ্যে এক কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করে নির্বাচন কমিশন। সেই তহবিল থেকেই এসব অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দেড় শতাধিক ভোট কেন্দ্রে আগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এসব সহিংসতায় ১১০টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ৬০৮ জন। তবে তারা বিভিন্ন সময় জামিন নিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই