টানা ২০ ঘণ্টা কোথায় ছিলেন বাবুল আক্তার?

স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়া পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবশেষে গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর বনশ্রীর শ্বশুরালয়ে ফিরে এসেছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে তার কোন হদিস মিলছিল না। পরিবারের সদস্যরাও তার ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেননি। টানা ২০ ঘন্টা তিনি কোথায় ছিলেন সে ব্যাপারেও কিছু জানাতে পারেননি তার বাবা ও শ্বশুর।

অন্যদিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলেছেন, ‘বাবুল আক্তারকে আমরা গ্রেফতার করিনি। তিনি কোথায় আছেন, সে ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।’ তার স্ত্রী মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। তিনি বলেছেন, ‘কেউ তাকে আটক বা গ্রেফতার করলে আমি অন্তত জানতাম।’

গতকাল সকাল থেকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে বাবুল আক্তার গ্রেফতার হয়েছেন! সংবাদকর্মীরাও এ নিয়ে দিনভর ছোটাছুটি করেও কোন তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি। একদিকে পরিবার তাকে খুঁজে পাচ্ছে না, অন্যদিকে পুলিশও তাকে ধরেনি। কোন স্বজনের বাড়িতেও যাননি। তাহলে তিনি কোথায় আছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সংবাদকর্মীদের দিন পার! সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল বিকেলে বাবুল আক্তার বনশ্রীর শ্বশুরালয়ে ফিরে আসেন।

তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘সে (বাবুল) দুপুরের পর বাসায় ফিরে দোতলায় অবস্থান করছে। তার সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি উপরের সিদ্ধান্ত। তবে এর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

তিন মাস আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই রয়েছেন বাবুল। স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় মাস পর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের গুঞ্জন ছড়ালেও এ বিষয়ে পুলিশ কিংবা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের স্পষ্ট কোনো বক্তব্যে ছিল না। তার প্রায় এক মাস পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, এসপি বাবুল চাকরি থেকে অব্যহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। যদিও বাবুলের দাবি তিনি বাধ্য হয়েই ওই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। চাকরি ফিরে পাওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি।

এর ২২ দিন পর গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে অব্যহিত দেওয়া হয়েছে। তারপর বিকালে বনশ্রীর ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বাবুল। তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় শ্বশুর বাড়ির কেউ কিংবা মাগুরায় থাকা তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। মোশাররফ বলেন, ‘রাতে সে এক তার আত্মীয়ের বাসায় ছিল, তবে কোন আত্মীয়ের বাসায় ছিল, তা জানি না।’

বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ এবং বাবা ওয়াদুদ দুজনই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক। বাবুলের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াদুদ বলেন, ‘আল্লাহ পাক ফয়সালা করার মালিক। দোষী না, তারপরও দোষী করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন এটা মেনে নিতে হবে, কোনো উপায় নেই।’ বাবুল চাকরি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও জানান তার বাবা। এজন্য পরবর্তী কোনো ধাপ থাকলে সেখানেও চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানান।

বাবুলকে আটক করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার টেলিফোনে বলেন, ‘আমরা তাকে ধরিনি। তিনি কোথায় আছেন, সেটাও আমরা জানি না।’ মিতু হত্যার মামলায় তাকে আসামি করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এটা বলার সময় এখনো আসেনি। আমরা আসলে মিতু হত্যাকাণ্ডের মূল সংগঠক মুসাকে খুঁজছি। গ্রেফতার হওয়া অপর আসামিরা মুসার নামই বলেছে। কিন্তু মুসা কার নির্দেশে মিতুকে খুন করেছে সেটা জানা দরকার।’

গতকাল দুপুরে বাবুল আক্তারের শাশুড়ি শাহিদা মোশাররফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপরাধী যেই হোক আমি মিতুর খুনিদের বিচার চাই।’ তিনি বলেন, ‘খালি কথাই হচ্ছে, বিচার হচ্ছে কই, বিচার তো দেখি না। আমি দায়ী হলে আমার বিচার হোক, বাবুল দায়ী হলে ওরও বিচার হোক। কিন্তু তদন্তের আগেই বাবুল দায়ী হবে কেন? সঠিক তদন্তটা আগে হোক।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজ (বুধবার) দুপুর ১২টা পর্যন্ত পুলিশ আমাদের সঙ্গে মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো কথা বলেনি।’

বাবুল-মিতু দম্পতির দুই সন্তান ভালো নেই বলে জানান শাহিদা। তিনি বলেন, ‘মিতু যখন খুন হয় ওর রক্তে ছেলেটা মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল। ও কথাই বলত না। এখনো স্কুলে যায় না। কদিন একটা কোচিংয়ে পাঠিয়েছিলাম। খালি ভয় পায়। মেয়েটা প্রায়ই এসে বুকে মুখ গুঁজে। মায়ের আদর কি নানি দিতে পারে?’ মেয়ের খুনের ঘটনায় কাউকে সন্দেহ করেন কি না বা বাবুল আক্তার কিছু বলেন কি না, জানতে চাইলে শাহিদা বলেন, ‘বাবুল এমনিতেও কম কথা বলে। এখন ও কিছুই বলে না।’

প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন সকালে বন্দরনগরীর ওআর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে। এই হত্যামামলার বাদী বাবুল। মামলার তদন্তে এখনও তার সম্পৃক্ততার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, তাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে দুই জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। -ইত্তেফাক



মন্তব্য চালু নেই