চাকরিতে ফিরতে চেয়ে বাবুল আক্তারের আবেদন
চাকরিতে ফিরতে চান আলোচিত পুলিশ সুপার মো. বাবুল আক্তার। এজন্য তিনি আগের ‘অব্যাহতিপত্র’ বাতিল করতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদনে বাবুল আক্তার উল্লেখ করেছেন, এর আগে তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদনে স্বাক্ষর করেছিলেন। এ সংক্রান্ত আবেদনের কপি সংরক্ষিত আছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রও নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (প্রশাসন) বরাবর বাবুল আক্তার আবেদনপত্র জমা দেন আগস্টের ৪ তারিখ। একই দিন এই আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গ্রহণ (রিসিভ) করেন। এ আবেদনে বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘কাজে যোগদান/কর্তব্য পালন প্রসঙ্গে।’
বর্ণনায় ৫ জুন নিজের স্ত্রী আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে— ‘সে অবস্থায় ওই ঘটনার সময় এবং পরবর্তীতে সরকার এবং আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা পেয়েছি তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ঘটনার আকস্মিকতায় বিপর্যস্ত আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে আমার শ্বশুরের বাড়িতে অবস্থান করি। সর্বোপরি, আমার দুটি ছোট ছোট বাচ্চা তাদের মাকে হারিয়ে এতটাই অস্বাভাবিক হয়ে যায় যে, তাদের সঙ্গ দেয়া ছাড়াও একাধিকবার চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হয়। এই কঠিন সময়ের প্রতিটি পর্যায়ে আমি আমার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তারা উদারতার সঙ্গে আমাকে মৌখিকভাবে মাহারা দুটি বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটানোর এবং আমাকে মানসিক বিপর্যস্ততা থেকে উত্তরণের জন্য অকুণ্ঠ সহযোগিতা দিয়েছেন। একজন সত্ অফিসার হিসেবে আমার এবং আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আমার চাকরি।’
আবেদনের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘এমতাবস্থায়, আমি অদ্য ০৪.০৮.২০১৬ইং তারিখ পূর্বাহ্ন হতে আমার Duties resume (দায়িত্বে পুনর্বহাল) করতে চাই।’
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আবেদনের পাঁচদিন পর চলতি আগস্টের ৯ তারিখ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর আরেকটি আবেদনপত্র জমা দেন বাবুল আক্তার। এখানে বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘চাকরি হতে অব্যাহতির আবেদন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া আবেদনের বিস্তারিত বর্ণনায় বলা হয়, ‘বিগত ৫.৬.২০১৬ইং তারিখে আমার স্ত্রী নির্মমভাবে খুন হন। ওই ঘটনার পর দুটো অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে আমি সীমাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাই। আমি এতটাই শোকাহত ছিলাম যে, শুধু সন্তানদের কথা ভেবে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। শোকাগ্রস্ত ও অসহায় অবস্থায় আমি যখন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছিলাম, সেই সময় বিগত ২৪.০৬.২০১৬ইং তারিখে পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে আমাকে চাকরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। স্ত্রীর মৃত্যুশোক, সদ্য মাহারা দুটো শিশুর ব্যাকুলতায় প্রতিকূল ও বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে আমি চাকরি হতে অব্যাহতির আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করি। একজন সত্ পুলিশ অফিসার হিসেবে এবং আমার সন্তানদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই চাকরি। এমতাবস্থায়, উক্ত অব্যাহতিপত্রটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি, যা আমি স্বেচ্ছায় দাখিল করিনি।’
আবেদনের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘অতএব বিনীত নিবেদন এই যে, গত ২৪.০৬.২০১৬ইং পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে দাখিলকৃত চাকরি হতে অব্যাহতির আবেদনপত্রটি প্রত্যাহারপূর্বক আমাকে চাকরির সুযোগ দানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জনাবের সদয় মর্জি হয়।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ রকম একটি আবেদন তারা পেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় এখনই এ আবেদনপত্রের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, মন্ত্রী দেশে ফিরলে এ আবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি চাইলে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমি এখন দেশের বাইরে আছি, দেশে ফিরে এ বিষয়ে কথা বলব।
এদিকে সূত্র জানায়, অব্যাহতি চেয়ে আগের আবেদনটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। মন্ত্রী দেশে ফিরলে পরস্পরবিরোধী দুটি আবেদনের বিষয়ে সুরাহা হবে। এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর থেকেই এসপি বাবুল আক্তারকে নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। বিশেষ করে ৫ জুন স্ত্রী খুন হওয়ার ১৯ দিনের মাথায় হঠাত্ করেই বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় এ বিতর্ক। এ সময় বাবুল আক্তার চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি শর্ত দিয়ে তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেয়া হয়েছে এমনটিও শোনা যায়। – মানবকণ্ঠ
মন্তব্য চালু নেই