সনদের স্বীকৃতির পক্ষে কওমি আলেম-শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসের পর সরকারের স্বীকৃতি নিয়ে আলেম ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। ইতোমধ্যে, প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেমরা স্বাগত জানিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানের মাদ্রাসার শিক্ষকরাও এ বিষয়ে বৈঠকও করেছেন।এমনকি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে ‘কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ’। আলেমরা বলছেন, সনদের সরকারি স্বীকৃতি সময়ের দাবি। ইসলাম ধর্মের শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান সারা পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করবে। দেশের বিভিন্ন স্থানের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
গত ১১ আগস্ট বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামা আয়োজিত অনুষ্ঠানে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সনদ দিতে হলে ন্যূনতম একটি কারিক্যুলাম দরকার। আমরা কওমি মাদ্রাসা কমিশন গঠন করে দিয়েছি। কিন্তু কওমি মাদ্রাসার পাঁচটি বোর্ড একমত হতে পারেনি। সবাই একমত হন অথবা যারা আগ্রহী, তারা একমত হন। আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দেবো’ প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্বাসের পর থেকেই সনদের স্বীকৃতি বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে আসে কওমি অঙ্গনে।
জানা গেছে,গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁও ইকরা মিলনায়তনে বৈঠক করেন কওমিপস্থী আলেমরা।শিগগিরই কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তাবায়ন করতে গঠন করা হয় ‘কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ’। স্বীকৃতির পক্ষে সারা দেশে জনমত তৈরি করতে প্রতিটি জেলায় আহবায়ক কমিটিও গঠনের প্রস্তাব করা হয় বৈঠকে।কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে মুফতি আবুল কাসেমকে আহবায়ক ও মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদকে সদস্য সচিব করে ঘোষণা করা হয়েছে মজলিসে আমেলা ও শূরার দুটি কমিটি।
এ প্রসঙ্গে কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক মুফতি আবুল কাসেম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতি প্রদানের জন্য যে আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা তা স্বাগত জানাই।এ পরিপ্রেক্ষিতেই ‘কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে। এ সংগঠন স্বীকৃতি আদায়ের জন্য জনমত তৈরি, মাদ্রাসাগুলোর ঐকমত্য গ্রহণ, সেমিনার ও আলোচনাসভা ও নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কাজ করে যাবে।
সনদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে ময়মনসিংহের জামিআ আশরাফিয়া মোমেনশাহী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি তাজুল ইসলাম কাসেমী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকরা আনন্দিত। দেশের সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বীকৃতি আছে, সনদের মূল্য আছে, শুধু অবহেলিত এই কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। আমরা দ্রুত এর বাস্তবায়ন চাই।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধর্মভিত্তিক একটি দলের মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছি। তার বক্তব্যকে অভিনন্দনও জানাই। কিন্তু এতে সরকারের লাভ থাকতে হবে। দেশের কল্যাণ থাকতে হবে। সারাদেশের আলেম,ওলামাদের এক করতে হবে। সবাইকে নিয়েই স্বীকৃতি আনতে হবে।
এদিকে, রবিবার এক বিবৃতিতে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির আশ্বাস দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের ১১১ জন আলেম। কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা যেন দ্রুত বাস্তবায়িত হয়, সরকারের প্রতি এ দাবিও জানান আলেমরা।
বিবৃতিতে জামিআ ইকরা বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতির আশ্বাস দেওয়ায় আমরা আনন্দিত। দেশের প্রায় ১৫ লাখ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন। অবিলম্বে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়ে এ দেশের আলেম-ওলামাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে আসবেন।
মাওলানা মারুফ বলেন, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি প্রদান করলে দেশের শিক্ষার হার যেমন বাড়বে, তেমনি কওমি অঙ্গনের মেধাবী তারুণ্যের সম্পৃক্ততায় উপকৃত হবে।
দেশের এক হাজার ৫০০টি মাদ্রাসা রয়েছে আঞ্চলিক মাদ্রাসা বোর্ড গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে। এই বোর্ডের মহাসচিব মুফতি রুহুল আমিন বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা রাজনীতির ফাঁদে পড়েছিলাম। আমরা চাই, শিক্ষা সব সময় রাজনীতি মুক্ত থাকুক। সবাই একমত না হতে পারলেও স্বীকৃতির পক্ষে আগ্রহীরা সবাই একমত হওয়া সম্ভব। স্বীকৃতির জন্য আমাদের প্রবীণ আলেমরা অনেক কষ্ট করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা’র সভাপতি ও শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিলে দেশেরই উপকার হবে। সনদের স্বীকৃতি দিয়ে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সব কাজে সম্পৃক্ত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। দেশের সব মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা সনদের স্বীকৃতি নিতে আগ্রহী। আমরা আশা করছি, সরকার দ্রুত স্বীকৃতি দেবে।
মন্তব্য চালু নেই