জঙ্গিবাদ দমনে র্যাব-পুলিশের সাফল্য বাড়ছে
দিন দিন পাল্টাচ্ছে অপরাধের ধরণ। অপরাধ সংঘটনের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে অপরাধীরা। এসব অপরাধ দমনে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারাও জঙ্গি ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে বেছে নিচ্ছেন নিত্য-নতুন কৌশল। অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সীমান্তেও রয়েছে অনেক সাফল্য।খবর দ্য রিপোর্টের।
রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে গত ১ জুলাই সন্ত্রাসীদের জিম্মা থেকে ভিকটিমদের উদ্ধার করার জন্য ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চলতি বছরে এটি সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ১১ ঘণ্টা সন্ত্রাসীদের জিম্মায় থাকার পর দ্রুততম সময়ে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনায় মুক্ত হন একজন জাপানি ও দুজন শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ মোট ১৩ জন। উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর ২ জুলাই সকালে মাত্র ১২-১৩ মিনিটের এ অভিযানটি পরিচালিত হয়।
গত ১ জুলাই শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় রেস্টুরেন্টটিতে হামলার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশ সদস্যরা জীবনের মায়া না করে অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করেন। পুলিশ, র্যাব, ডিবি, সোয়াট, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের এ যৌথ অভিযানে প্রাণ হারান পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান। সারারাত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, সিটি, সোয়াট, ডিবি, এসবি ইউনিটসহ নৌবাহিনীর কমান্ডো ফোর্সও ঘটনাস্থল ঘিরে রেখে সতর্কাবস্থানে থাকে। এরপর কমান্ডো অপারেশনের সিদ্ধান্ত হলে সিলেট থেকে বিমানযোগে ১০০ জন চৌকস কমান্ডোকে ঢাকায় আনা হয়। তারা সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ঘটনাস্থল রেকি করে সেনাবাহিনীর স্নাইপার ও প্যারা কমান্ডোদের বিশেষ দল ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে। বিদ্যুতের মতোই মাত্র ১২-১৩ মিনিটের মধ্যে ১১ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান ঘটানো হয়। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী সম্মিলিতভাবে এ অপারেশনে অংশ নেয়।
এদিকে, একই মাসেরই ২৬ তারিখে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ভবনে অবস্থান নেওয়া জঙ্গিদের আস্তানা উচ্ছেদে পরিচালনা করা হয় ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’। ভোর ৫টা ৫১ মিনিট থেকে ৬টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত এক ঘণ্টার এ অভিযানে আস্তানায় থাকায় ৯ জঙ্গি নিহত হয়। আটক হয় একজন। কিন্তু এ ঘটনার সবচেয়ে সফল দিক হল অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য অথবা কোনো সাধারণ মানুষ হতাহত হননি।
পুলিশ জানায়, ২৫ জুলাই সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর থানা পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগীতায় কল্যাণপুরের মেসে জঙ্গিবিরোধী তল্লাশী শুরু করে। কয়েকটি মেসে অভিযান শেষে ৫ নম্বর রোডের ‘জাহাজ বাড়ি’ খ্যাত ৫৩ নম্বর বাসায় অভিযান শুরু করলে জঙ্গিরা পুলিশের উপর হামলা করে। তখন পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে এক জঙ্গি পালিয়ে যায় এবং এক জঙ্গিকে আটক করা হয়। এরপর ভবন ও তার আশেপাশের এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পৌঁছে অভিযানের কৌশল নির্ধারণ করেন এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সকালে সূর্য ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে শুরু হয় ‘অপারেশন স্ট্রর্ম-২৬’। অভিযানের শুরুতে স্নাইপার রাইফেল নিয়ে আশপাশের ভবনে অবস্থান নেন বেশ কয়েকজন সদস্য। পুলিশের বিশেষায়িত উইং সোয়াটের পাশাপাশি অভিযানে অংশ নেয় ডিএমপির সিটি, ডিবি ইউনিট, র্যাব, থানা পুলিশের সদস্যরা। কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এক ঘণ্টা পরিচালিত এ অভিযান শেষ হয় ৬ টা ৫১ মিনিটে। সোয়াটের চৌকস সদস্যদের অভিযানে ঘটনাস্থলে নিহত হয় ৯ জঙ্গি।
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, অপরাধ ও জঙ্গি দমনকে বাংলাদেশ পুলিশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশকে আরও সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। কমিউনিটি পুলিশিং কাজে লাগিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
যেসব যুবক প্রভাবিত হয়ে ভুলপথে পা বাড়িয়েছে, যারা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে তারা যদি ফিরে আসতে চায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে সহায়তা করবে বলেও জানান আইজিপি।
আইজিপি বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় পুলিশ নিজের জীবন বাজি রেখে জঙ্গিদের দমন করেছে। আমাদের মনোবল দৃঢ় রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনসহ জননিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর।
অভ্যন্তরীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যে পিছিয়ে নেই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্ত এলাকায় বাহিনীটি যথারীতিই তাদের ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেছে। সীমান্ত দিয়ে পণ্য চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দের ঘটনা সবচেয়ে উল্লেখজনক। মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, বিদেশি মদ, চোলাই মদ, বিয়ার, গাঁজা, হেরোইন ও বিভিন্ন নেশাজাতীয় ইনজেকশন। এছাড়াও রয়েছে মানবপাচারের মতো অপরাধ।
২০১৩ সালে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে আনা-নেওয়ার সময় ৫৬৭ কোটি টাকা মূল্যের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করে বাহিনীটি। এর মধ্যে দেশের ভেতরে ঢোকার সময় ৫১৮ কোটি ৪৮ লাখ ২৮ হাজার ৮০৫ টাকার ও দেশ থেকে পাচার হওয়ার সময় ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৬ টাকার চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। ওই বছর সীমান্তে অবৈধভাবে পারাপার ও চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১১ হাজার ৯৬৬ জনকে আটক এবং এ সব ঘটনায় নিকটস্থ থানায় ২৬ হাজার ৩২৩টি মামলা দায়ের হয়। সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ৬ হাজার ৩৮৬ জন মিয়ানমার নাগরিককে পুশব্যাক ও ৩৬ জনকে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। একই অভিযোগে ১৫৭ জন ভারতীয় নাগরিককে পুশব্যাক ও ৯৩ জনকে থানায় সোপর্দ করা হয়। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচারের সময় ৭৩৬ জন নারী ও ১৮৬ জন শিশুকে উদ্ধারসহ ১৬ জন পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি।
২০১৪ সালে ৬২৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের চোরাচালান ও মাদক দ্রব্য জব্দ করে বিজিবি। এর মধ্যে অন্তর্মুখী জব্দ করা চোরাচালান দ্রব্যের আনুমানিক মূল্য ৫৮২ কোটি ৫০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা এবং বহির্মুখী জব্দ করা চোরাচালানের আনুমানিক মূল্য ৪১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ওই সময়ে বিজিবির অভিযানে উদ্ধার অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি পিস্তল, ৮টি রিভলভার, ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, ২৫টি বিভিন্ন প্রকার বোমা, ৩৩৬ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গুলি ও ৩ বোতল গান পাউডার। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে এক হাজার ২২ জনকে আটক করে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের সময় ৭ হাজার ৩০ জনকে আটক করা হয়। সীমান্ত পথে অবৈধ পাচারের সময় ৭৬৪ জন নারী-শিশুকে উদ্ধার এবং ১৩ জন মানবপাচারকারীকে আটক করা হয়।
গত বছর ২০১৫ সাল জুড়ে ৭৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার চোরাচালানি পণ্য ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে বিজিবি। একই সময় ৬৭টি পিস্তল, ৪০টি বন্দুক, ৫৪টি বিভিন্ন প্রকার বোমা ও ককটেল, ২৯টি ইপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও ৪৪ কেজি ৯০০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করে। এই এক বছরে বিজিবির অভিযানে মাদকপাচারসহ অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ হাজার ২১৬ জন এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে এক হাজার ৪৯২ জন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করা হয়। সীমান্ত পথে ৬ হাজার ৫৯২ জন মিয়ানমার নাগরিকের অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা হয়।
বিজিবি সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১২-১৫ এই চার বছরে বিজিবির অভিযানে শুধুমাত্র ইয়াবাই এক কোটি ৭৫ লাখ ৭৪৫ পিস উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি ৫২ লাখ ১৯ হাজার ৮৫ পিস, ২০১৪ সালে ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৮ পিস, ২০১৩ সালে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৮ পিস এবং ২০১২ সালে ৮ লাখ ৪০৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে বাড়ছে বাহিনীটির সাফল্য।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এলিট ফোর্স র্যাব দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিল। র্যাবের তৎপরতার কারনেই সারাদেশে একযোগে যারা বোমা বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন সময়ে নাশকতা সৃষ্টি করেছিল সে সকল জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষ সারির নেতা থেকে বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদেরকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভবপর হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যুদণ্ড, কারো যাবজ্জীবন, কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদের কারাভোগ করেছে এবং বেশকিছু মামলা এখনো বিচারাধীন।
তিনি আরও জানান, এ ছাড়াও কিছু সদস্য জামিনেও বের হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য আত্মগোপন করে আছে। যার ফলে সাংগঠনিকভাবে পূর্বের মতো সারাদেশে একযোগে নাশকতা সৃষ্টি করার সক্ষমতা না থাকলেও জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম একদম বন্ধ হয়ে যায় নাই। তবে র্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। জঙ্গি দমনে আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযানের কারণে অনেক জঙ্গি সংগঠন বর্তমানে নিস্ক্রিয় আছে। যারা নাশকতা করতে চাইছে তাদের আমরা আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হচ্ছি।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, এই এলিট ফোর্স জন্মলগ্ন থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ অপরাধী ও সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় এনেছে। এ ছাড়াও এক হাজার ১৮২ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যকে আইনের আওতায় এনেছে র্যাব। এদের মধ্যে শুধুমাত্র জেএমবির সদস্য ৬১৭। বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে ৩৪৯ টি গ্রেনেড বা ককটেল বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র ৯৬টি, বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ ৪ হাজার ৯২৮ রাউন্ড, বিভিন্ন প্রকার এক হাজার ৯৮৩ কেজি বিস্ফোরক, ৬২৪ টি গ্রেনেড বডি, বিভিন্ন প্রকার ৯ হাজার ১২৩ টি ডেটোনেটর এবং বিপুল সংখ্যক সাংগঠনিক বই, সিডি, লিফলেট ও পোষ্টার উদ্ধার করা হয়েছে।
তাছাড়া চরমপন্থী, জলদস্যু ও বনদস্যুদের দমনে র্যাবের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। র্যাব চরমপন্থী দমনে ১৮৪টি সফল অভিযান পরিচালনা করে। যেখানে গ্রেফতারের সংখ্যা ৪২৬ জন। গ্রেফতারদের কাছ থেকে ১৪৭ অস্ত্র, এক হাজার ৮৭৬ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৩০ বোমা ও ৫৫ অন্যান্য অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
জলদস্যু দমনে ৮৩টি সফল অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে গ্রেফতার হয়েছে ১১২ জন। তাদের কাছ থেকে ২৪৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩ হাজার ১৯৯ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৬২ অন্যান্য অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
বনদস্যু দমনে র্যাব ৬৫টি সফল অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানগুলোতে গ্রেফতার হয় ৫৩। গ্রেফতারদের কাছ থেকে ২১৯ আগ্নেয়াস্ত্র, ৪ হাজার ৮৭৪ রাউন্ড গোলাবারুদ ও ১১ অন্যান্য অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
চলতি বছরেই র্যাবের কাছে বড় দুটি জলদস্যু অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। গত ২৯ মে সুন্দরবনের জলদস্যু মাস্টার বাহিনী প্রধান ও তার সহযোগীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু মাস্টার বাহিনী প্রধানের আত্মসমর্পণ গ্রহণ করেন। এ সময় মাস্টার বাহিনী তাদের অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জমা দেন। এ জন্য পুলিশও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
পরে বাগেরহাটের মংলায় বিএফডিসি জেটিতে ১৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে সুন্দরবনের বনদস্যু ‘মজনু বাহিনী’ ও ‘ইলিয়াস বাহিনী’র প্রধানসহ ১১ সদস্য। তারা ২৫টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও এক হাজার ২০ রাউন্ড গুলি জমা দেন। এ সময় র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে দেশপ্রেম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে তা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে। গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরে জঙ্গি দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে সক্ষমতা দেখিয়েছে তা জনমনে আস্থা বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা জঙ্গিবাদ রুখবো। এ দেশে জঙ্গিদের ঠাঁই হতে পারে না।
মন্তব্য চালু নেই