যেভাবে আত্মঘাতী হামলাকারী বানায় জঙ্গিরা
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয় রয়েছে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। তবে একজন সদস্যকে আত্মঘাতী হামলাকারী বানাতে বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে জঙ্গিরা। র্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
র্যাবের গোয়েন্দারা জানান, আত্মঘাতী হামলায় আগ্রহী, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে পৃথক ইউনিট করা হচ্ছে। জঙ্গিরা প্রথমত দাওয়াতের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করে। জঙ্গিরা এই দাওয়াত তারা দেয় দু’ভাবে। সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দাওয়াত দেওয়ার আগে তারা ব্যক্তির মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে। প্রাথমিক যাচাই শেষে ওই ব্যক্তির সঙ্গে জঙ্গিরা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর সদস্য বানিয়ে তাকে জিহাদ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করে।
গোয়েন্দারা জানান, যখন নতুন সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উগ্রবাদে আগ্রহী হয়, তখন জঙ্গি দলগুলোর আখি (ভাইগণ) তাদের সঙ্গে সশরীরে, ফোনে কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে দেখা করে। নতুন সদস্যরা আরও সক্রিয় হলে তাদের টেলিগ্রাম অ্যাপসের সিক্রেট গ্রুপে সংযুক্ত করা হয়। এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্তির আগে সদস্যদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আকিদাগত তথ্যাদি দিতে হয়। টেলিগ্রামে তাদের জিহাদের বিষয়ে বয়ান করা হয়। এই গ্রুপে সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করে। শীর্ষ জঙ্গিরা তাদের গতিবিধি খেয়াল করে। নতুন সদস্যদের বিশ্বস্ত মনে হলে তাদের থ্রিমা অ্যাপসে যুক্ত করা হয়। এরপর তাদের সঙ্গে জঙ্গিদের কথিত বড়ভাই বা আমির যোগাযোগ করে। তাকে চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর তাকে আত্মঘাতী হামলা ও জিহাদি মাঠের কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়; নাশকতায় পাঠানো হয়। এই মিশনকে জঙ্গিরা হিযরত বলে থাকে। যে হিযরতে বেরিয়ে পড়ে, সে গ্রুপ থেকে অফলাইনে চলে যায়; সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
গোয়েন্দা সূত্রটি আরও জানায়, এবিটি ও জেএমবি’র শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বহীনতার কারণে তারা নিজেদের মধ্যে এক রকমের সমঝোতায় আসে এবং ‘দাওলাতুল ইসলাম’ এর ব্যানারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ‘আত-তামকীন’ নামের একটি ওয়েবসাইট তাদের নাশকতা ও হামলা প্রচার করে থাকে। জেএমবির দুটি গ্রুপ দাওলাতুল ইসলামের ব্যানারে গুলশান ও শোলাকিয়ায় নাশকতা চালায়। জেমএবির এ রকম আরও কয়েকটি গ্রুপ আত্মঘাতী হামলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তারা যেকোনও স্থানে হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে।
গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার কয়েকজন আত্মঘাতী হামলার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। তারা তাদের আমিরের নির্দেশনা পেলেই হামলা চালাত। র্যাব সূত্রটি জানায়, সারাদেশে জঙ্গিদের স্লিপারসেলের বেশ কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে নাশকতার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুক, ইমো ছাড়াও টেলিগ্রাম, থ্রিমা অ্যাপসের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে থাকে। তাদের দলে নারী সদস্যও আছে। জঙ্গিরা হামলার পর ‘আত-তামকিন’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গণমাধ্যমে নিজেদের আইএস হিসেবে প্রচার করে। তবে আইএস’এর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। জেএমবি ও এবিটি নিয়ে গঠিত দাওলাতুল ইসলাম গুলশান, শোলাকিয়া ও মাদারীপুর কলেজ শিক্ষকসহ এখনও পর্যন্ত মোট ১১টি হামলা চালিয়েছে। আত্মঘাতী হামলাকারীদের এ ধরনের কয়টি গ্রুপ আছে, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি র্যাব।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএমবি পরিচালিত ‘আত-তামকীন ওয়েবসাইটের অ্যাডমিনসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরা সবাই আত্মঘাতি গ্রুপের সদস্য।
র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এই রকমের কয়টি গ্রুপ রয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অনেক সদস্য এখনও বাইরে সক্রিয় রয়েছে।’
মন্তব্য চালু নেই