সানি লিওনের আত্মজীবনী
:‘মাঝে মধ্যে আমি চিন্তা করে খুবই অবাক হই। আমি কোথায় ছিলাম আর এখন কোথায় আছি। কিভাবে আমার জীবনের সবকিছু পাল্টে গেল।’ তার অতীত এবং বর্তমান অবস্থান নিয়ে তার সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যম ফেসবুকে এমনি কথা লিখেছেন সাবেক পর্নো তারকা বলিউড অভিনেত্রী সানি লিওন। তারপর তিনি বর্ণনা করেন বিগ বস এবং বলিউডে আসার বাস্তব গল্প।
এ অভিনেত্রীর ভাষায়, ‘আমি এবং আমার স্বামী আমাদের বাড়ির সোফায় বসেছিলাম। হঠাৎ আমার কাছে বিগ বসের ব্যাপারে প্রস্তাব আসে। তারপর স্বামীর সঙ্গে আলাপ করে রাজি হয়ে যাই। আর সেই ঘটনা আমার জীবনকে পাল্টে দেয়। সে সময় আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, আমি এই সুযোগটি কাজে লাগাব।’
কিন্তু যত সহজভাবে পাঠকরা সানি লিওনের বলিউডের আসার বিষয়টি ভাবছেন তার কাছে বিষয়টি এতটা সহজ ছিল না। সানি লিখেছেন, ‘আমি আমার বলিউডে আসার ঘটনাটি যত সহজভাবে বলছি বিষয়টি এত সহজ ছিল না। এটা ছিল স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার মতো একটা ব্যাপার। যে এতদিন ধরে উল্টোপিঠে চলে অভ্যস্থ সে এখন সামনের দিকে আগানোর চেষ্টা করছে। ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। এখনো বিষয়টি এত সহজ নয়। আমার এ জার্নিতে রয়েছে উন্মাদনা, পাগলামি, উত্থান, পতন, উপরে ওঠা এবং নিচে নামা সব কিছুই।
তার আত্মজীবনীতে নিজের নানা প্রতিবন্ধকতার কথাও লিখেছেন সানি লিওন। তিনি লিখেছেন, ‘আমার সঙ্গে অনেকের রাস্তায় দেখা হয়, আবার আনেকেই মেইল পাঠায় তারা তাদের দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। তখন চিন্তা করি যদি আমি তাদের খোলামেলাভাবে কথা বলার আশা দিতে পারতাম।
সেক্সের বিষয়টি কোনো উন্মাদনা নয়। এটা সবাই করে। এটা এমন একটা বিষয় যেটা প্রতিদিন, প্রতি সেকেন্ডে বিশ্বজুড়ে ঘটছে অথচ আমরা সবার সামনে খোলামেলাভাবে সেটা বলতে পারি না। যদি আপনি আপনার সঙ্গীদের সঙ্গে বিষয়গুলো খোলামেলাভাবে আলোচনা করতে পারেন তাহলে বিষয়টি সম্পূর্ন অন্যরকম হবে এবং আমি মনে করি, সেটা ভালো হবে।’
নিজের অতীত পেশা অ্যাডাল্ট এন্টারটেইনমেন্ট নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘মানুষ মনে করে আ্যডাল্ট এন্টারটেইন্টমেন্ট মানেই খারাপ কিছু। যাইহোক, আমেরিকায় দুটো মানুষ একসঙ্গে বারে দেখা করল, তারপর তারা অ্যাপার্টমেন্টে গেল তারচেয়ে অ্যাডাল্ট এন্টারটেইনমেন্ট বিষয়টি বেশি সুরক্ষিত। আপনার ওই ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, আপনি জানেন না ওই ব্যক্তি দুইদিন বা এক সপ্তাহ আগে কি করেছে। আর এ বিষয়টি আমেরিকাতেও খোলাখুলি আলোচনা হয় না।
বারে যখন আপনার সঙ্গে কারো পরিচয় হয় এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে যান তার আগে আপনার প্রশ্ন করা উচিৎ, শেষবার কখন তিনি নিজের পরীক্ষা করিয়েছেন? আপনি যখন এ ধরণের প্রশ্ন করা শুরু করবেন তখন সচেতনতা আরো বাড়বে। কিন্তু ইন্ডিয়াতে মানুষ দাবি করতে পছন্দ করে, ‘আমি বিয়ের আগে পর্যন্ত ভার্জিন থাকব’ অথবা ‘আমি ভালোবাসা এবং বিয়ের ব্যাপারে বিশ্বাসী।’ এ ব্যাপারটি আমার বাবা মাযের বেলাতেও ঘটেছে। কারণ বিয়ের আগে তারা কেউই সেক্স করেননি।’
তার এ আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে বলিউড সিনেমায় তার প্রতিবন্ধকতা। তিনি বর্ণনা করেছেন, যখন ‘জিসম টু’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল তখন অনেকেই সিনেমাটির পোস্টার পুড়িয়েছিল। আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম এরা একদিন ঠিকই আমাকে পছন্দ করবে কিন্তু এখন আমাকে পছন্দ করে না। আমি ভয় পাচ্ছিলাম তারা আমার পোস্টারকে পুঁড়িয়েছে তারা যেন আমাকে না পোঁড়ায়! আমি তাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে পারব না।
কিন্তু আমাকে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হোক আমি তাদেরকে বোঝাতে পারব, আমি আপনাদের মতোই সাধারণ একজন মানুষ। আমি জানি, এখানে মানুষ আমার সঙ্গে কাজ করতে ভয় পায়। কিন্তু আমি সবাইকে বলতে চাই আমার মতো পরিশ্রমী সহ অভিনয় শিল্পী আরো একটিও পাবেন না।’
দর্শকদের ব্যবহারে অনুশোচনা করে এ অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘তারপরেও আমি প্রতি মুহূর্তে বিচারের সম্মুখীন হই। কেউ না কেউ আপনার দোষ বিচার করছে-ই। আপনি যখন বড় পর্দায় সিনেমায় আপনাকে উপস্থাপন করলেন তার মানে আপনি নিজেকে বিচারের কাঠগড়ায় উপস্থাপন করলেন। আমি জানি আমি কারো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারব না কিন্তু আমাকে তো সুযোগ দেওয়া উচিৎ। আমি জানি, আমার অতীত পরিবর্তন করতে পারব না। আমি এটাও জানি, অতীতে আমি যা করেছি তা ইন্টারনেট থেকে মুছে ফেলতে পারব না। কিন্তু আমি আমার অতীত নিয়ে লজ্জাবোধ করি না। আমার অতীত আমাকে আমার বর্তমান অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আমি এ জন্য খুশি এবং আমি এ কারণে গর্ববোধ করি।
‘সেক্সি’ এই শব্দটা আমার কাছ থেকে সরিয়ে ফেলতে চাই না। এটাই আসল আমি। মানুষ বুঝতে পারছে না তারা সানি লিওনকে বড় হতে দেখছে। অ্যাডাল্ট অভিনেত্রীর বিষয়টি আমার জীবনের একটি অধ্যায় এবং এখন সে অধ্যায়টি বন্ধ হয়ে গেছে। আমি কোনো ইমেজ ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছি না। আমি দুটি কাজ এক সঙ্গে করতে পারব না। তাই আমি সে অধ্যায়টি বন্ধ করে দিয়েছি এবং বলিউডের প্রতি মনোনিবেশ করেছি।
যত দিন সিনেমায় আবেদনশীল দৃশ্য থাকবে ততোদিন সেক্সিনেস বিষয়টিও থাকবে। আর এ কারণেই আমরা সিনেমা দেখি। আমাদের চোখে এটা পড়ে না যখন শাহরুখ খান তার শার্ট খুলে ফেলে। সে সময় আমাদের মনে হয় না সে আমাদের পাশের বাড়ির ছেলে। তখন ঠিকই বলি ‘সে হট, সেক্সি’। আমি এটাই বলতে চাই যে, আমার সেক্সিনেস এবং সাহসীকতা এখনো সে পর্যায়ের যায়নি। আমি নিজেকে ‘গফবল’ মনে করি। আমি তেমন একটি মেয়ে যার সুগঠিত দেহ আছে।
রাগিনী এমএমএস টু সিনেমায় একটি দৃশ্য ছিল যেখানে রকস্ (চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন পারভিন দাবাস) বলেছিলেন, ‘পর্নো থেকে আবার ঋতুপর্ণ ঘোষ আসলো কিভাবে?’ বাস্তব জীবনেও অনেকে আমার সম্পর্কে এমনটাই ভাবে। আমি এই কথাগুলো আমার সামনে এমনকি অনলাইনেও বলতে ও লিখতে দেখেছি। কিন্তু মানুষ আমাকে যা ভাবে আমি কিন্তু সেটা না। প্রকৃতপক্ষে মানুষ আমার সম্পর্কে যা ভাবে আমি তার ধারে কাছেও না। আপনাদের বিবেচনা জ্ঞান দেখে আমার লজ্জা হয়!
আমি খুশি আমি অন্যান্য তারকাদের মতো গসিপ টপিক নই। আমি এসব সাজানো নাটক থেকে দূরে থাকতে চাই। আর আমার কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসাটাকেই আমি শ্রেয় মনে করি। আমি মজা করতে পছন্দ করি। যদি আমার চলার পথে কোনো বন্ধু তৈরি হয় সেটা অনেক চমৎকার একটা বিষয়।
আমার কাছে বলিউডে অভিনয়ের বিষয়টা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো! আমি কেন সেটা নষ্ট করব? আমি কেন বাইরের কোনো পার্টিতে যাব এবং এমন কিছু করব যেটা নিয়ে মানুষ নানারকম বাজে কথা বলবে? তারা ইতোমধ্যে আমাকে নিয়ে অনেক খারাপ ইঙ্গিতে কথা বলেছে! আমি তাদের আর বাড়তি কিছু বলার সুযোগ দিতে চাই না।
কেউ যদি অ্যাডাল্ট এন্টারটেইনমেন্টে কাজ করে, তাহলে মানুষ মনে করে সে খারাপ পথে চলে গেল। তারা অ্যাডাল্ট এন্টারটেইনমেন্টকে কোনো কাজ মনে করে না। কিন্তু অন্যান্য কাজের মতো এটাও একটা কাজ। অন্যান্য ইন্ড্রাস্ট্রি, বলিউড কিংবা অ্যাডাল্ট ইন্ড্রাস্ট্রি সব খানেই পর্দার পেছনে কিছু গোপন ব্যাপার থাকে। আমি সেগুলোর মধ্যে নেই।
আপনি আমাকে যা প্রশ্ন করবেন আমি সরাসরি তার উত্তর দিব। আমার লুকানোর কিছু নেই। আর আমাকে আমি সে অবস্থানে নিতেও চাই না। আমার অতীতে আমি যে কাজ করেছি তা ছিল একার সিদ্ধান্ত। আমাকে এটার জন্য কেউ জোর করেনি। আর আমি কখনো প্রেসার অনুভবও করিনি।
আমাদের প্রকৃত পরিচয়ের ব্যাপারে স্বাভাবিক হতে হবে। আমি কি সে বিষয়ে আমার ধারণা আছে।মানুষ আমাকে যা ভাবে আমি সে বিষয়ে বলছি না। কারণ আমি তা নই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মোটেও তা নই। কিন্তু আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। আমি মনে করি কেউ যদি আমার কারণে সিনেমাকে সেক্সি বলে সেটা একটা চমৎকার ব্যাপার। আপনারা আমাকে সিনেমায় সেক্সি চরিত্রের একজন মনে করেন! আমি ব্যাপারটাতে দারুণ খুশি। আমি মনে করি, আমার কাজ ঠিকভাবেই করেছি।
আমি মনে করি, আমি দিনের আলোর মতোই সত্য।আমার প্রত্যেকটি কাজই অত্যন্ত সাহসী। আমার অনেক ধৈর্য্যও আছে। কিন্তু যদি আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় আমি অবশ্যই এর প্রতিবাদ করব। আর আমার লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার লড়াই চালিয়ে যাব। আমি মানুষের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে অনেক পছন্দ করি। এটা এমন একটা বিষয় যা আমি আগে করেছি এবং বিষয়টি সবসময় উপভোগ করি।
শেষ কথা, মানুষ আমাকে পছন্দ করুক আর না করুক তারা আমাকে ঠিকই গুগলে অনুসন্ধান করবে।
মন্তব্য চালু নেই