চার কারণ সামনে রেখে তদন্ত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল ইসলাম লিলন হত্যাকাণ্ডে সম্ভাব্য চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ কারণগুলো সামনে রেখে হত্যাকারীদের শনাক্ত ও ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
কারণগুলো হলো : জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক লক্ষ্য, দাম্পত্য ও পারিবারিক কারণ এবং বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব। এ ছাড়া শনিবার রাতে ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামে ফেসবুক পেজে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে যে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টিও আমলে নিয়েছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডে ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) একটি সূত্র জানিয়েছে। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং এস তাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মৌলবাদী ছাত্রসংগঠনটি যুক্ত ছিল।
এ কারণে তদন্তের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিবিরের শীর্ষ নেতা ও ক্যাডাররা কে কোথায় অবস্থান করছে, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিশেষ টিম।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসের বাইরে মহানগরীর চৌদ্দপায়া এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন ড. শফিউল। শনিবার ক্যাম্পাসে একটি মিটিং শেষে বেলা ৩টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। এ সময় বাসার সামনে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লুটিয়ে পড়েন ড. শফিউল। হামলার পরপরই বিহাসের পেছন দিক দিয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করছেন নিহত শিক্ষক ড. শফিউলের নিকটাত্মীয়রা। ড. শফিউলের নিকটাত্মীয় রফিকুল বারী মুকুল জানান, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা এ খুনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ড. শফিউল মাঝেমধ্যেই তাদের বলতেন তাকে খুন করা হতে পারে। জামায়াত-শিবির তার পেছনে লেগেছে। জামায়াত-শিবির কেন তাকে খুন করতে পারে- এ প্রশ্নের জবাবে মুকুল আরো বলেন, কয়েক বছর আগে ড. শফিউল লিলন তার ক্লাসে বোরকা পরে না আসার জন্য এক ছাত্রীকে উপদেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা তাকে হুমকি দিয়েছিল। মুকুল দাবি করেন, ড. শফিউলের কোনো শত্রু বা তার সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল না।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একটি প্রকল্পের টাকাপয়সা ব্যয় নিয়ে বিভাগেরই একজন প্রাক্তন শিক্ষকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়েছিল ড. শফিউলের। পরে ওই শিক্ষককে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই ঘটনার জের ধরেও খুন হতে পারেন ড. শফিউল। এমন আশঙ্কাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
নিহত শিক্ষকের দাম্পত্য ও পারিবারিক কিছু ঘটনার কারণেও খুনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, ড. শফিউল তিনটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী জলির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। দ্বিতীয় স্ত্রী স্বপ্নার সঙ্গে বছর খানেক আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার। তৃতীয় স্ত্রীর ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ।
ড. শফিউল হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সম্ভাব্য কারণগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য রাজশাহীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় বসবাসরত এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঘাতকদের দলে তিন থেকে চারজন ছিল। সবার বয়স ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যে। দুজনের মুখে দাড়ি রয়েছে। ঘটনার বেশ কিছু সময় আগে থেকে তারা বিহাসের প্রধান ফটকের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। মাঝে মাঝে তারা মোবাইল ফোনে কথা বলছিল। এই শিক্ষক আরো জানান, হামলাকারীরা এলাকার বাইরে থেকে এসেছিল বলে মনে হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরএমপির উপকমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তা তদন্ত করতে ইতিমধ্যে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। ঘটনাস্থল থেকে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্ভাব্য কারণগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। খুব দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
মন্তব্য চালু নেই