গুলশান ট্র্যাজেডি: কোথায় সেই হাসনাত করিম?
গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক প্রকৌশলী হাসনাত করিমের অবস্থান সম্পর্কে জানে না তার পরিবার। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ জুলাই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছিল। তার পরিবারের দাবি, হাসনাতের অবস্থান সম্পর্কে পুলিশের কেউ মুখ খুলছে না। এ ব্যাপারে খোঁজ নিলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকেও কিছু বলা হচ্ছে না। কোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় আটক করা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার নির্দেশনা রয়েছে। হাসনাত করিমকে গত আট দিনেও আদালতে হাজির করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি ডিবির কোনো কর্মকর্তার কাছ থেকে। এমনকি এই হামলার ঘটনায় পুলিশ ৫ জুলাই মামলা করার পর চার দিন পেরিয়ে গেছে, ওই মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর খবর জানা যায়নি। ফলে তাকে আটক করা হয়েছে, না জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়েছে, কিংবা তার বর্তমান অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। খবর: ঢাকাটাইমসের।
হাসনাত করিমের বাবা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, “হাসনাতকে এখন কোথায় রাখা হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে কোথায় রেখেছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। তাকে আটক করা হয়েছে, না জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারেও কিছু বলছে না।”
হাসনাতের বাবা আরও বলেন, “আটক বা গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হবে, এমন আশঙ্কা থেকে আমি কোর্টে লোক রেখেছি। তাকে আদালতে পাঠানো মাত্র যেন আমি জানতে পারি। কিন্তু হাসনাতকে আদালতেও পাঠানো হচ্ছে না।”
হাসনাতকে ডিবি অফিসে নেওয়ার প্রথম দিকে তার বাবা সংবাদ সম্মেলন করার কথা বললেও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে সে ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেন বলে জানান তিনি।
শনিবার বিকালে মুঠোফোনে হাসনাতের বাবা আরো বলেন, “ঈদের বন্ধের কারণে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ডিবি অফিসে গেলেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না। তাই কী করব বুঝতে পারছি না। রবিবার আবার ডিবি অফিসে যাব। দেখি কী হয়। তারপরে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেব।”
২ জুলাই শনিবার সকালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অন্যান্যের সঙ্গে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ হাসনাতকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানের আগে-পরে রেস্টুরেন্ট ও আশপাশের এলাকা থেকে হাসনাত করিমসহ যাদের উদ্ধার করা হয় তাদের প্রায় সবাইকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সবাই ছাড়া পেলেও হাসনাত করিম এখনো বাসায় ফেরেননি।
গোয়েন্দারা জানান, প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিম্মি অবস্থা থেকে যাদের উদ্ধার করা হয় তারা পুরো সময়ই ভেতরে ছিলেন। সেখানকার পরিস্থিতির প্রত্যক্ষদর্শী তারা। তদন্তের অংশ হিসেবে তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে নাম ও পরিচয় নেওয়া হয়। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন।
হাসনাত করিম রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক। হামলাকারীদের কয়েকজন ওই ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা যায়। তিনি হামলাকারীদের সহায়তা করেছেন কি না সেটা নিয়েও নেকে প্রশ্ন তোলে।
নর্থ সাউথের চাকরি ছাড়ার পর হাসনাত করিম দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। ইংল্যান্ডে প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এমবিএ করেন। প্রায় দেড় বছর আগে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
অভিযানের সময় হাসনাত করিমের বাবা রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শুক্রবার রাতে হামলার পর হাসনাত করিম তাকে ফোন করে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমীন পারভীন ও দুই সন্তান সাফার (১৩) ও রায়ান (৮)। মেয়ে সাফার জন্মদিন উদযাপন করতে শুক্রবার ইফতারের পর গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন হাসনাত।
হাসনাত করিমের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “আমি হাসনাত করিমের অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানি না। কারণ আমি তখন বিদেশে ছিলাম।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, হাসনাত করিমকে হয়তো ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
২৪ ঘণ্টার বেশি কাউকে রাখা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, “কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। হাসনাত করিম প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা হয়তো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে রয়েছে।”
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট দিলরুবা সরমিন বলেন, কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে ইতিমধ্যে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। কিন্তু কোনো মামলা ছাড়া কাউকে এত দিন আটক রাখা বেআইনি।
১ জুলাই শুক্রবার রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশ সদস্য, ১৭ বিদেশি নাগরিক ও তিন বাংলাদেশি নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ছয় জঙ্গি নিহত হয় বলে সেনাসদরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। অভিযানে জীবিত উদ্ধার করা হয় তিন বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জিম্মিকে। আটক করা হয় শাওন নামের এক সন্দেহভাজনকে, যে চিকিৎসাধরি অবস্থায় ৮ জুলাই শুক্রবার মারা যায়।
মন্তব্য চালু নেই