মৃত জঙ্গির প্রতি ভালোবাসা বাঙালি মেয়েদের!
গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে নিহত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ছবি বাংলাদেশ পুলিশ প্রকাশ করার আগেই মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে, যাদেরকে হামলাকারী বলে জানায় তারা।
পুলিশের এক ঘণ্টা আগেই হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিতর্কিত’ ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’। এর পরই একটি ছবির সঙ্গে ঢাকার এক যুবকের চেহারার মিল পায় তারই ফেসবুকের বন্ধুরা। আইএস প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে হাস্যোজ্জ্বল ওই তরুণ। পেছনে আইএসের পতাকা।
এর পর ফেসবুকে অনেকে সাইটে প্রকাশিত ছবির পাশে যুবকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া ছবি পাশাপাশি দিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন অনেকেই। ওই ‘সুদর্শন’ তরুণের প্রোফাইল অনুযায়ী তার নাম নিবরাস ইসলাম।
ফেসবুকে নিব্রাস ইসলাম নিজেকে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এর আগে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও করেছেন। এর আগে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
গুলশানে হামলাকারী ওই তরুণের ছবি পুলিশ প্রকাশ করার পর ‘রূপমুগ্ধ’ একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তরুণী তার রক্তাক্ত ছবির পাশে টাইমলাইনের ছবি পাশাপাশি দিয়ে লিখেছেন, ‘জঙ্গিগুলা এতো হ্যান্ডসাম কেন? ক্রাশ খাইছি!’ আরো কয়েকজন কে দেখা যায় ওই হমলাকারীর টাইমলাইন তাঁদের নিজস্ব টাইমলাইনে লিংক শেয়ার করে লিখেছেন,
`OMG!!!!
Crush…Crush…Crush
i want T mrryy him
Ato shundol boy kivbe ak joner murdr krte pare!
Or lyf ta o spl krlo amar ta o’
অন্য আরেকজন টাইমলাইনের লিংক শেয়ার করে লিখেছেন,
Crash…
Crash…
Crash…
Ato cute ekta chele ai kajta korlo kno!
He was terrorist but he is my crush….
এর পরই ওই ‘ক্রাশ’ খাওয়া স্ট্যাটাস ও ছবির স্ক্রিন শটগুলো ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
এক রেঁস্তোরায় ঢুকে নিরপরাধ ২০ জন দেশি-বিদেশিকে জিম্মি করে হত্যাকারীর ‘সুদর্শন’ চেহারায় ‘ক্রাশ’ খাওয়ার মতো স্ট্যাটাসে তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন ফেইসবুক ব্যাবহারকারী অনেকেই।
তারা বলছেন, সুশিক্ষার অভাব আর দীর্ঘদিনের পাকিস্তানি ধ্যানধারণা লালন করে আসা পরিবারের অনেকেই বিবেচনাবোধ হারিয়েছে। তাদের কাছে সবকিছুই মজার। জাতির এ গভীর সংকটেও তারা ‘ক্রাশ’ খাচ্ছেনা উপরন্তু তাঁরা তাঁদের নীচু মনমানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে।
ফেইসবুকে এক তরুণী ওই ক্রাশ খাওয়া তরুনীর ছবি সমেত স্ট্যাটাসটি শেয়ার করে লিখেন,
“যে সব আপুরা জাত প্রজাত না বুঝেই ক্রাশ খাইতেই থাকেন, খাইতেই থাকেন। কার উপর খাইলেন কি তার পরিচয়! ওই জায়গায় নিজের ভাই-বোনের লাশ পড়ে থাকলে দেখতাম ক্রাশ কিৃ “
ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত হামলাকারী নিবরাস ইসলামের টাইমলাইনে যে ছবিগুলো দেখা যায়, তাতে তার আধুনিক পোশাক, আত্মীয়দের সঙ্গে সেলফি, সুইমিং পুলে সাঁতারের দৃশ্য অবাক করেছে অনেককেই।
রেস্তোরাঁয় হামলার সময় জঙ্গিরা জিম্মিদের পবিত্র কোরআন থেকে সুরাপাঠ করতে বলা আর হিজাব পরিহিত নারীদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। সেসবের উল্লেখ করে অনেকেই বলেছেন, নিবরাস যাদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন তারা তো হিজাব পরিহিত ছিল না। তা হলে তার কেন এ দ্বিচারিতা?
এসব প্রশ্ন আর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ভয়াবহতা নিয়েই সরব এখন ফেসবুক।
শুক্রবার রাতে জঙ্গিরা ওই রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে জিম্মি করে দেশি-বিদেশি অন্তত ৩৩ জনকে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও জবাই করা অবস্থায় পাওয়া যায় ২০ জনের মরদেহ।
ওই রেস্টুরেন্টে নিহত ১৭ বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক; ৭ জন জাপানের, তাদের মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশ মেট্রোরেল প্রকল্পে কাজ করতেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয়ও রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কোন দিকে যাচ্ছে তরুণ সমাজ ? ভাবতেই কষ্ট হয় কোমলমতি তরুণরা আজ সমাজে পরিচিতি পাচ্ছে জঙ্গি হিসেবে। অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আজ জঙ্গি। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের ছাত্র জঙ্গি।
ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখলাম। একজন লিখেছেন সুশীলরা বলে মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গি। মাদ্রাসা জঙ্গি বানানোর কারখানা। এখন দেখা যাচ্ছে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আজ জঙ্গি। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের ছাত্র জঙ্গি। এই ক্ষেত্রে সুশীলদের বক্তব্য, তাদের ব্রেন ওয়াস করা হয়েছে। কি পক্ষপাত মূলক কথা! কতটা মূর্খ হলে এমন কথা বলা যায়?
আজকাল তো আমাদের মেয়েরা কিউট ছেলে দেখলেই পাগল। সে জঙ্গিই হোক আর আর্মি অফিসারই হোক। তাদের আফসোস আহা! কি কিউট ছেলেটা! সে কি জঙ্গি হতে পারে?
প্রেম করার আর ছেলে নেই পৃথিবীতে।
মেয়েদের কি আসলেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে? সবাই না। তবে এরা কার কন্যা? কার বোন? খুব জানতে ইচ্ছা করে।
তরুণরা জঙ্গি হচ্ছে। বিকৃত মনা তরুণীরা তাদের উপর ক্রাশ খাচ্ছে।
বাবা মায়েদের দায়িত্ব কি বাবা মারা ঠিক মতো পালন করছে? আমাদের তরুণ সমাজ কোন দিকে যাচ্ছে?
মন্তব্য চালু নেই