তনুর বাবাকে হত্যার চেষ্টা!
মাসুদ আলম, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচার চেয়ে তার মা আনোয়ারা বেগম বলেন, তনুর খুনিদের না ধরে আমাদের পাহারা দিয়ে রাখা হচ্ছে। বাসার ডিশ লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে যেন তনুর সংবাদ দেখতে না পারি। গত বৃহস্পতিবার তনুর লাশ উদ্ধারের স্থানে তনুর বাবা গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে গাড়ি ও মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে তনু হত্যা তিন মাস পূর্তি উপলক্ষে কুমিল্লার গণজাগরণ মঞ্চ এ সমাবেশের আয়োজন এক প্রতিবাদ সমাবেশে তনুর মা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, গত ২৬ মে সিআইডির কর্মকর্তারা যখন একটি সংস্থার কার্যালয়ে তনুর লাশ পাওয়ার সময় আলামত সংগ্রহকারী ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সে দিন রাত ৮টার দিকে কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট বোর্ডে ডিউটি শেষ করে তনুর বাবা এয়ার হোসেন ফিরছিল। তনুর বাবা এয়ার হোসেন তনুর লাশ পাওয়ার স্থান দিয়ে আসার সময় ‘কুমিল্লা সেনানিবাস’ লেখা একটি বাস প্রচন্ড গতিতে এসে তাকে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, তনুর বাসা রাস্তার পাশে দ্রুত চলে গেলে রক্ষা পান। এর কিছুক্ষণ পর দুই জন আরোহীর একটি মোটর সাইকেল তনুর বাবাকে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি রাস্তা পাশে খাদে পড়ে রক্ষা পান। তনুর মা আনোয়ারা বেগম যখন কান্না জর্জরিত কণ্ঠে বক্তব্য রাখছিলেন তখন কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং পথচারীরা রাস্তা দাড়িয়ে, যানবাহন থামিয়ে তার বক্তব্য শুনে।
বক্তব্যে তিনি বলেন, সেনানীবাসে তিনটি গান না গেয়ে সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার অপরাধে সেনাবাহিনীরা আমার তনুকে হত্যা করে। আমি এরকম জানলে আমার মেয়েকে সিলেট যেতে দিতাম না। তিনি বলেন তনুকে হত্যা করার পর সেনাবাহিনীর ৫০ জন সিআইডি আমার মেয়ের সব স্মৃতি ভেঙ্গেচুড়ে নিয়ে গেছে। ওরা লেখার ডায়েরিও নিয়ে গেছে, বাসা থেকে সব অ্যালবাম নিয়ে গেছে। বিচার হতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলি না। আমরা আমার মেয়ের হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলি। অবিলম্বে তনুর হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। তনু হত্যাকান্ডের তিন মাস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত হত্যাকারীদের বিচার হয়নি। আমি গরিব বলে কি মেয়ে হত্যার বিচার পাবেন না? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তনুর প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ভুল উল্লেখ করে চিকিৎসকদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন আমাদের বাসায় এসে কর্ণেল মাসুদ বললেন- রাস্তার পাশে যখন তনুর স্যান্ডেল পেয়েছেন তখন স্যান্ডেল নিয়ে চলে এলেন না কেন? কোনও বাবা-মা কি পারে সন্তানের স্যান্ডেল নিয়ে তার খোঁজ না করে ঘরে ফিরে আসতে? তনুর লাশ শিয়াল-কুকুরে খেলে তখন বলতো শিয়ালে মেরেছে। তনুর যদি স্ট্রোক হতো তাহলে তার লাশ রাস্তার পাশে পড়ে থাকতো। জঙ্গলে পড়ে থাকতো না। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকতো না।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্ট্রির কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক পরেশ রঞ্জন কর, মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন বাবুল, তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন, গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার মুখপাত্র আবুল কাশেম হৃদয়, লেখক ও প্রাবন্ধিক মোতাহার হোসেন, কুমিল্লা গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তনু হত্যার ৯০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও আসামিদের শনাক্ত করা হয়নি। বক্তারা দ্রুত তনুর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান।
উল্লেখ গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর একটি কালভার্টের পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা মো. ইয়ার হোসেন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
মন্তব্য চালু নেই