সেতুর ওপর সাঁকো! ঝুঁকিতে লাখো মানুষ
সেতু নয়, বরং বলা চলে সেতুর কঙ্কাল। এসবের ওপর নড়বড়ে সাঁকো তৈরি করে তা ব্যবহারে প্রতিদিন পারাপারের কাজটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করতে হচ্ছে বরগুনা জেলার লাখো মানুষকে। বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলায় ২৬৬টি লোহার সেতু জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে কয়েক বছর যাবৎ। যে কোনও মুহূর্তে এসব সেতু ভেঙে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, হতে পারে প্রাণহানি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭/৯৮ অর্থবছরে এলজিইডির অধীনে হালকা যান চলাচল প্রকল্পের আওতায় বানানো হয় এসব সেতু। দীর্ঘদিনের সেতু জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকলেও প্রকল্প না বাড়ায় তা মেরামতে নেই কোনও উদ্যোগ। বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় ছোট শিশুদেরও স্কুলে যেতে হয় এসব সেতু ব্যবহার করে।
প্রকল্পের আওতায় বরগুনা সদর উপজেলায় ৩৫, বেতাগী উপজেলায় ৪৬, বামনা উপজেলায় ৩৬, পাথরঘাটা উপজেলায় ৬২ ও বর্তমান আমতলী (আমতলী ও তালতলী )উপজেলায় ৮৭ টি সেতু নির্মাণ করা হয়। যার সবগুলো এখন চলচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর, আইলা ও মহাসেনের মত ঘুর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়েছে অনেক সেতু। আবার লবণপানির প্রভাবেও এসব ধাতব সেতু ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে অনেকটাই। এলাকার সাধারণ মানুষ চলাচলের জন্য বাঁশ, খেজুর গাছ ও কাঠ দিয়ে এসব সেতু মেরামত করে চলছে এসবের ওপর দিয়েই।
বরগুনা সদর উপজেলার ডালভাঙ্গা এলাকার সেতুটি ভাঙা পড়ে আছে ২০০৭ সাল থেকে। ঘূর্ণিঝড় সিডরে এই সেতুটির ক্ষতি হলেও তা আর মেরামত করার উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এই সেতুটি পার হয়ে জেলা শহরে আসতে হয় হাজারও মানুষকে। স্থানীয়রা ভাঙা সেতুর ওপর সুপারি গাছ ও বাঁশ দিয়ে মেরামত করে পারাপারের কাজ চলছে। এর ওপর দিয়েই চলছে মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহন। দুর্ঘটনা হয়ে পড়েছে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনির হোসেন বলেন, সেতু আছে, কিন্তু ভাঙা। প্রতিবছর মেরামত করে চলতে হয় আমাদের। ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে যেতে হলে এই সেতুই ব্যবহার করতে হয়।
ডালভাঙ্গা এলাকার ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেলের চালক মো. সেন্টু বলেন, সেতুটি ভাঙা থাকার কারণে যাত্রী কম হয়। রোগী নিয়ে আসার মতোও কোনও ব্যবস্থা নেই । এর আগে এই সেতুর ওপর থেকে মটরসাইকেল নিয়ে তিন-চারজন নদীতে পড়ে গেছেন।
চরধূপতি গ্রামে খাকদন নদী পারাপারে তৈরি সেতুর ওপরকার সাঁকো দিয়ে চলতে হচ্ছে এলকাবাসীকে। স্থানীয় শিক্ষক মীর বাবুল বলেন, এই সেতুটি দীর্ঘদিন যাবৎ ভাঙা থাকায় ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে চলাচলে। নদীর ওপারের শিক্ষার্থীরা আগে এলেও এখন ঝুঁকি নিয়ে আর আসছে না।
আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের বৈকালিক বাজার সংলগ্ন সেতুটি পাকা থাকলেও মাঝের অংশ ভেঙে পড়েছে অনেক আগেই। এ সড়ক ব্যবহার করে জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় হাটে যেতে হয় বলে জানা গেছে। স্থানীয় লোকজন ভেঙে পড়া ওই মাঝের অংশে কাঠ দিয়ে নামমাত্র সংস্কার করে চলাচল করছেন।
বৈকালিক বাজার সংলগ্ন পিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মানুষ অনেক কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয়ভাবে মেরামত করে এর ওপর দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। জানি না কখন বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এই সেতুগুলো সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে নতুন করে তৈরি না করলে হাজারও মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করেন।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহবায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, সেতুগুলো অনেক আগে থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মানুষ চলাচলের উপযোগী নয়। প্রকল্পের আওতায় তৈরি প্রায় সব ক’টি সেতু ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগবিছিন্ন হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই উপকূলীয় এলাকার নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।
বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৭/৯৮ সালের অর্থবছরে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই সেতুগুলো নির্মিত হয়েছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও লবণ পানির প্রভাবে এসব অনেকটাই ভেঙে গেছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায় সবগুলো সেতু। মেরামত করার মত কোনও প্রকল্প নেই বলে মেরামতের কাজ করা হচ্ছে না।
তবে শিগগিরই এ অবস্থা দূর হওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, লোহার সেতু টেকসই না হওয়ায় এসব নদী বা খালে নতুন প্রকল্পের মধ্যমে টেকসই সেতু দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। -বাংলা ট্রিবিউন
মন্তব্য চালু নেই