‘শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পায়নি সরকার’
নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে আনা ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি সরকারের পক্ষ থেকে করা তদন্ত প্রতিবেদনে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়’।
এমনকি এই প্রধান শিক্ষককে বিধি মোতাবেক বরখাস্ত করা হয়নি বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে কমিটি চারটি সুপারিশ করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (মাধ্যমিক-২) বেগম রুহী রহমান শুক্রবার বলেন, ‘তদন্তে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আনীত ধর্মীয় বিষয়ে উস্কানীমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ মে তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় জানা যাবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে রুহী রহমান প্রতিবেদন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (শ্যামল কান্তি) ধর্মীয় বিষয়ে কোনো উস্কানীমূলক কথা বলেছেন এমন কোনো কথা প্রমাণিত হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিধি মোতাবেক বরখাস্ত করা হয়নি। আর সেখানে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।’
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ছাত্রের বক্তব্যের ভিত্তিতে বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেই শিক্ষার্থীও ‘একেক সময় একেক কথা বলেছে’।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা চার দফা সুপারিশ হচ্ছে- প্রথমত, যেহেতু স্কুলের অর্থ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্ব ও অনাস্থা বিরাজমান, সেহেতু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আর্থিক বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানসম্পন্ন কোনো বিশেষ কমিটি দ্বারা অধিকতর তদন্ত করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান স্কুল ম্যানেজিং কমিটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এরই মধ্যে এটি হয়েছে।
তৃতীয়ত, যেহেতু অভিযোগকারীর (দশম শ্রেণির এক ছাত্র) স্কুল কমিটির সামনে উপস্থাপিত জবানবন্দি ও গণমাধ্যমে প্রদত্ত জবানবন্দি এবং তার মায়ের লিখিত অভিযোগ ও মৌখিক অভিযোগের মধ্যে গরমিল লক্ষ্য করা যায় (বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত), সেহেতু বিতর্কিত বিষয়টির সত্যতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হতে পারে।
চতুর্থত, প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগপত্র জোর করে আদায় ও সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি আইনসিদ্ধ হয়নি বিধায় তিনি স্বপদে বহাল আছেন বলে বিবেচিত হতে পারে।
এদিকে এরই মধ্যে শ্যামল কান্তিকে স্বপদে পুনর্বহালের পাশাপাশি ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
গত শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও চৌরাস্তা এলাকায় এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ব্যাপারে ওই শিক্ষককে পুনর্বহাল এবং বিরাজমান কমিটি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা কার্যকর থাকবে।
গত ১৩ মে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন-এমন অভিযোগ এনে এলাকাবাসীর সামনে সেলিম ওসমানের নির্দেশে তাকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়। সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয়। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়।
১৬ মে শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ১৯ মে তাকে স্বপদে বহাল করে স্কুলের কমিটি বাতিল করা হয়।
মন্তব্য চালু নেই