নীরব ঘাতক ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’

পুরো বিশ্বের যত হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটে তার প্রায় অর্ধেকই ‘নীরবে’ ঘটে। আর এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক অধিকাংশই প্রাণঘাতী হয়। নতুন এক গবেষণায় গবেষকরা এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

এই ধরনের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ মানুষ বুঝতে পারে না। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটি বিপজ্জনক। বদহজম, পেশি টান এবং ফ্লুজনিত সমস্যায় বারবার বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার গবেষকেরা বলেছেন, নীরব হার্ট অ্যাটাক স্ট্যান্ডার্ড হার্ট অ্যাটাকের মতোই সাধারণ। যার কারণে প্রতি বছর হাজারে অন্তত একশ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। নারীদের মধ্যে যারা নীরব হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৫০ শতাংশের বেশি গত এক দশকে মারা গেছেন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এর ঝুঁকির পরিমাণ বেড়েছে এক চতুর্থাংশ।

হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ ব্লক হয়ে গেলে স্বাভাবিক হার্ট অ্যাটাকের মতো এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়। যা মারাত্মক ক্ষতি ও ভয়ের কারণ। কিন্তু অনেক রোগীর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের লক্ষণই দেখা যায় না। ভুলভাবে অনুমান করা হয় তাদের বদহজম, ফ্লু বা পেশিতে টান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ রোগীই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। ফলে পরবর্তী সময়ে ভয়ানক হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা অস্ত্রোপচার করা হয় না।

গবেষক এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষদের ‘নীরব হার্ট অ্যাটাক’ এর বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, অনেকের বিষয়টি অগোচরেই থেকে যাচ্ছে।

হৃদরোগ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী একটি রোগ। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ রোগীর মৃত্যু ঘটনা ঘটে পূর্বে যাদের হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু তারা তখন বুঝতে পারেননি।

নর্থ ক্যারোলিনার ওয়েক ফরেস্ট স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক ডা. জু মিং জাং এবং অন্যান্য গবেষকরা নয় হাজার ৪৯৮ জন মধ্য বয়সী নারী-পুরুষের তথ্য বিশ্লেষণ করেন।

গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, দশ বছরের অধিক সময়ের মধ্যে ৭.৪ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। তারমধ্যে ৪৫ শতাংশের ক্ষেত্রে নীরব হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটেছে। কোনো ধরনের লক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক চিহ্নিত করা হয়েছে। স্ক্যানের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি ধরা পড়েছে।

গবেষকেরা খুঁজে পেয়েছেন, গত এক দশকে ৫৮ শতাংশ নারী নীরব হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ২৩ শতাংশ।

ডা: জু মিং জাং বলেন, নীরব হার্ট অ্যাটাক বা সাইলেন্ট মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফ্রেকশন্স(এসএমআই) সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের মতোই। এক্ষেত্রে হালকা বা কোনো উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। যার কারণে এসব রোগীরা মেডিকেল চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে পরবর্তী প্রতিকূল পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে পারে না। এতে দ্বিতীয় বার হার্ট অ্যাটাক বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। সূত্র: ডেইলি মেইল।



মন্তব্য চালু নেই