যে অপরাধে যে সাজা

জামায়াতের  নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে ১৪ টি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে তার বিরুদ্ধে আনা ১৪ টি অভিযোগের ভিত্তিতেই আজ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
যে দুই অভিযোগে মৃত্যদন্ড: মীর কাসেমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ-১১: মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে ২৮ নভেম্বর ঈদুল ফিতরের দিন মীর কাসেমের নির্দেশে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। সেখানে তার ওপর এত অত্যাচার চালানো হয় যে, সে মারা যায়। তাকেসহ আরও ছয়জনকে হতা করে তাদের লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
অভিযোগ-১২:একাত্তরের নভেম্বরে মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা চট্টগ্রামের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হাজারী গলির বাসা থেকে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগী রাজাকার-আলবদররা হাজারী গলির ২৫০ থেকে ৩০০ দোকান লুট ও অগ্নিসংযোগ করে। মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদর বাহিনী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে নভেম্বরের কোনো এক সময় ধরে নিয়ে যায়। তাকেসহ রঞ্জিত দাশ ওরফে লাথু এবং তন্তু সেন ওরফে রাজুকে ডালিম হোটেলে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

মেয়াদভিত্তিক সাজা যেসব অভিযোগে:

অভিযোগ-২: এই অভিযোগে মীর কাসেমকে ২০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। ২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে,মীর কাসেমের নেতৃত্বে ১৯ নভেম্বর চাকতাই থেকে লুত্ফর রহমান ফারুককে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মীর কাশেমের উপস্থিতিতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। লুত্ফর রহমান একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

এছাড়া ৩,৪,৬,৭,৯ ও ১০ অভিযোগে প্রত্যেকটিতে ৭ বছর করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩: একাত্তরের ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর সকালবেলা আসামির নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলার ভাড়া করা বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। মীর কাসেমের উপস্থিতিতে ডালিম হোটেলে তার ওপর অত্যাচার চালানো হয়। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার মুহূর্তে জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয়-স্বজন তাকে ডালিম হোটেল থেকে উদ্ধার করেন।

অভিযোগ-৪: একাত্তরের ২৪ নভেম্বর সাইফুদ্দিন খানকে মীর কাশেমের নেতৃত্বে ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা সালাহউদ্দিন খানকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করে আলবদর বাহিনী। পরে তাকে জেলে দেয়া হয়।  তাকে জেল থেকে ১৬ ডিসেম্বর ভোরবেলা উদ্ধার করে তার আত্মীয়-স্বজন।

অভিযোগ-৬: ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুনুর রশিদকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল এবং সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন করা হয়। মীর কাসেমের নির্দেশে তাকে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তার চোখ উত্পাটন করা হয়। তাকে সালমা মঞ্জিল থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকালে উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগ-৭: মীর কাসেমের নেতৃত্বে সাত-আট যুবক ডবলমুরিং থানা থেকে সানাউল্লাহ চৌধুরী ও হাবিবুর রহমানকে ২৭ নভেম্বর ধরে নিয়ে যায়। তাকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় তারা শুনতে পেয়েছেন যে, হোটেল থেকে অনেককে নিয়ে গেছে এবং তাদের হত্যা করা হয়েছে। তারা মুক্তি পায় ৬ ও ৯ ডিসেম্বর।
অভিযোগ-৯: ২৯ নভেম্বর সৈয়দ মো. এমরান, সৈয়দ কামাল, সৈয়দ ওসমান, সৈয়দ কামালসহ ছয়জনকে অপহরণ করা হয়। ডালিম হোটেলে ধরে নিয়ে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর তারা মুক্ত হয়।
অভিযোগ-১০: ২৯ নভেম্বর মীর কাসেমের নির্দেশে মো. জাকারিয়া, মো. সালাউদ্দিন ওরফে ছুট্টু মিয়া ও নাজিমউদ্দিনকে এনএমসি হাইস্কুলের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়। বয়স কম হওয়ায় ৩০ নভেম্বর নাজিমউদ্দিনকে ছেড়ে দেয়া হয়। জাকারিয়া এর সাত-আট দিন পর, ছুট্টু মিয়া ১১ বা ১২ ডিসেম্বর মুক্তি পান।

অভিযোগ-১৪: নভেম্বর কোনো একদিন মীর কাসেমের নির্দেশে এজেএম নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।এই অভিযোগে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
যেসব অভিযোগে খালাস:

অভিযোগ-১: এই অভিযোগে বলা হয়, মীর কাশেমের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর ওমরুল ইসলাম চৌধুরীকে অপহরণ করে। পরে কয়েক দফায় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেল, পাঁচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল এবং একটি চামড়ার গুদামে নিয়ে নির্যাতন করা হয় তাকে। ১২ নভেম্বর তাকে সালমা মঞ্জিল নির্যাতন কেন্দ্রে ধরে নিয়ে যায় এবং কিছু কাগজপত্রে জোর করে স্বাক্ষর করে নেন। পরে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

অভিযোগ-৫: ২৫ নভেম্বর আনোয়ারা থানার আবদুল জব্বারকে বাসা থেকে মীর কাসেমের নির্দেশে রাজাকার কমান্ডার জালাল চৌধুরী ধরে নিয়ে যায়। ডালিম হোটেলে মীর কাসেমের সামনে হাজির করা হয়। সেখানে নির্যাতন করা হয় তাকে। ১৩ ডিসেম্বর তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগ-৮: ২৯ নভেম্বর রাতে নুরুল কুদ্দুস, মোহাম্মদ নাসির, নুরুল হাসেমসহ আরও কয়েকজনকে এনএমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে  অপহরণ করা হয়। তাদের ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাদের ১৬ ডিসেম্বর উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগ-১৩: মীর কাসেমের নির্দেশে নভেম্বর কোনো একদিন সুনীল কান্তি বর্ধন ওরফে দুলালকে ধরে নিয়ে চাকতাই দোস্ত মোহাম্মদ পাঞ্জাবি বিল্ডিংয়ে নির্যাতন চালানো হয়। ১৬ তারিখ সে মুক্তি পায়।



মন্তব্য চালু নেই