যেভাবে পালিয়ে গেলো খুনিরা (সিসিটিভি ফুটেজ)

রাজধানীর কলাবাগানের নিজ বাড়িতে সোমবার বিকেলে চাপাতির কোপে নিহত হন মার্কিন দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল অফিসার ও দাতা সংস্থা ইউএস এইডের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক খুন হওয়ার একদিন পরের এই ‘কিলিং মিশনে’ এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে পাঁচজন সরাসরি অংশ নেন। মিশন শেষ করতে তারা সময় নেন পাঁচ মিনিট।

যে বাসায় খুন হয়েছেন জুলহাজ, তার পাশের বাড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি) ধারণকৃত ফুটেজ হাতে এসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আর এতে কয়েকজনের সন্দেহজনক গতিবিধি দৃশ্যমান। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, সন্দেহজনক ওই ব্যক্তিরাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিট ১ সেকেন্ডের ফুটেজে হাতে ব্যাগ থাকা একজনকে দেখা যায়। এর মাত্র ৫ সেকেন্ড পরেই তিনজনকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়, তাদের কাঁধেও ছিল ব্যাগ। তার কয়েক সেকেন্ড পর আরো একজন দৌড়ে পালায়। এরমাঝে মোটরসাইকেলেও একজনকে দেখা গেছে। তবে মোটরসাইকেলে থাকা ওই ব্যক্তির সঙ্গে অপর পাঁচজনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না ভিডিও থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায় না।

সন্দেহজনক এই গতিবিধির মাত্র ৩০ সেকেন্ড আগেই জুলহাজের বাসার পাশ দিয়ে কলাবাগান থানার একটি গাড়িও যেতে দেখা যায়। ওই গাড়ি থেকেই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মমতাজ এক দুর্বৃত্তকে জাপটে ধরলে তিনি ব্যাগ ফেলে মমতাজকে কুপিয়ে পালিয়ে যান।

সোমবারের এই হামলায় নিহত জুলহাজ সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনির আপন খালাত ভাই ও ‘রূপবান’ পত্রিকার সম্পাদক। রূপবান পত্রিকাটির মূল বিষয়বস্তু লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা। ওই হামলায় নিহত অপরজন তনয় থিয়েটারকর্মী ও জুলহাজের বন্ধু।

আনসার আল ইসলাম নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে মঙ্গলবার দুপুরে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে একটি টুইট করা হয়। এতে বলা হয়, আলহামদুলিল্লাহ, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’লার অশেষ অনুগ্রহে আনসার আল ইসলামের মুজাহিদিনরা বাংলাদেশে সমকামিতা চর্চা ও প্রসারের পথিকৃৎ, সমকামীদের গুপ্ত সংগঠন ‘রূপবান’র পরিচালক জুলহাজ এবং তার সহযোগী সামির মাহবুব তনয়কে হত্যা করেছে।

এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র সব সময় ছিল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে টার্গেট কিলিং করা হচ্ছে। শিবির ও জঙ্গি সন্ত্রাসীরা কখনও জেএমবি, কখনও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বলে খুন করছে। আসলে জামায়াত-বিএনপি যাই হোক, শেকড় এক।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে ‘সুপরিকল্পিত’ দাবি করে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, আমরা ধারণা করছি খুনিরা আগে থেকেই রেকি করে করেছে। জায়গাটা যথেষ্ট সিকিউরড। খুনিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় আশপাশ থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে তাদের ধরা যেত।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি দক্ষিণের ডিসি মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, আমার এভিডেন্স সংগ্রহ করছি, ছায়া তদন্ত করছি।

গেল কয়েকবছর ধরেই বাংলাদেশে একইজাতীয় হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে সমমনা কয়েকজন ব্লগার, প্রকাশক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কথিত পীরকে। এসব ঘটনার সঙ্গে আইএস বা আল-কায়েদার জড়িত থাকার খবর এলেও সরকারের দাবি, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই।

https://youtu.be/Yxv4GMoFr6w



মন্তব্য চালু নেই