ভারতীয় হাতির আতঙ্কে ঘরছাড়া পাহাড়িরা
ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়া পেড়িয়ে বুনো হাতি দলে দলে আসছে বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে। এক পর্যায়ে এসব হাতি বন-জঙল ছেড়ে চলে আসছে পাহাড়ি এলাকার লোকালয়ে। নষ্ট করছে রোপা ধান ক্ষেত, কলা বাগান আর সবজি ক্ষেত। অনেক সময় ঢুকে যাচ্ছে বাড়িঘরে। এতে আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে রাত কাটাচ্ছে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের এলাকায় ভারতীয় বুনো হাতির আক্রমনে আতঙ্কিত অধিবাসীরা এসব কথা জানিয়েছেন।
তারা জানান, গত ৫ বছরে এসব এলকায় অন্তত ১৫ জন হাতির আক্রমনে প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া বেশ কিছুদিন যাবত এসব হাতির আক্রমনে তারা বিপর্যস্ত। ভারতীয় এসব হাতির আক্রমন প্রতিহত করতে প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা ক্ষুব্ধ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারতের মেঘালয় প্রদেশের সীমান্তবর্তী বকশীগঞ্জের গারো পাহাড়ের সাতানিপাড়া, গারোপাড়া বালুঝরি, টিলাপাড়া, লাউচাপড়া, ডুমুরতলা, দিগলকোনা, হাতিবেড়কোনা, শোকনাথপাড়া, কনেকান্দি, চন্দ্রপাড়াসহ ১০টি গ্রামে বাঙালী ও হিন্দু গারো কোচসহ বিভিন্ন গোত্র মিলে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বাস। এসব এলাকায় বাংলাদেশে ও ভারতের ভূখণ্ডে রয়েছে বিশাল বনভূমি। ওই বনাঞ্চলে থাকা হাতির পাল ভারতীয় সীমানা পেড়িয়ে বাংলাদেশের লোকালয়ের কৃষিপ্রধান এলাকায় চলে আসে। এসব এলাকায় রোপাধান আর ফসলি জমি নষ্ট করে হাতির দল আবার ফিরেও যায় বনে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
রোববার জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কামালপুর ইউনিয়নের বালুঝুড়ি, সোমনাথপাড়া, সাতানিপাড়া, টিলাপাড়া, দিঘলকোনা গ্রামে বুনো হাতির দল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ যাবত বুনো হাতি তাণ্ডব চালিয়ে সীমান্তবর্তী এসব পাহাড়ি এলাকার কয়েক শ’ একর জমির ধান-সবজি ক্ষেত ফসল খেয়ে এবং বাগানের গাছপালা দুমড়ে মুচড়ে ধ্বংস করছে।
তারা জানান, এলাকাবাসী মশাল ও লাকরিতে আগুন জ্বেলে, ঢাকঢোল পিঠিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরপরও হাতির পাল এলাকা ছাড়ছে না।
ভারতীয় এসব হাতি বাংলাদেশে আসার কারণ সম্পর্কে স্থানীয়রা জানায়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএস) সদস্যরা তাদের এলাকায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র পটকা ফটিয়ে শব্দ করে। ফলে ভয়ে হাতির পাল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এরপর কাটা তারের ওপর বিদ্যুতের আলো থাকায় হাতির দল ভারতের বনাঞ্চলে ফিরতে না পেরে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় বিনা প্রতিরোধে গ্রামে প্রবেশ করে ক্ষতি করছে।
এ ব্যাপারে টিলাপাড়ার বাসিন্দা পিটিসন সাংমা জানান, ভারতীয় বন্যহাতি এ এলাকায় অবস্থান করে তার দু’বিঘা রোপা আমন ক্ষেত তছনছ করছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাতি তাড়ানোর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আদিবাসী নেতা হোসিও রং বলেন, ‘গত ৩০ বছর যাবত আমরা হাতির ভয়ে জীবন যাপন করলেও হাতির হাত রক্ষা করতে প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত ৫ বছরে এ এলাকায় হাতির আক্রমনে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছে।’
স্থানীয় কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তুফা কামাল জানান, ‘এ এলাকায় প্রায়ই লোকালয়ে হাতির এসে ফসলসহ জানমালের ক্ষতি করছে।’
সুবিধা বঞ্চিত আর বন্যহাতির আক্রমণে দিশেহারা এসব পাহাড়ি এলাকার অধিবাসীরা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
মন্তব্য চালু নেই