ফ্লাইট মিস করেছেন? কালকে অবশ্যই যাচ্ছেন, কান্না বন্ধ করে ঘুমান…

ছবিতে দেখা যাচ্ছে জাহাঙ্গীরকে। এমন অসংখ্য জাহাঙ্গীরের আস্থার জায়গা এখন এয়ারপোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটরা

প্রবাসীদের আস্থার জায়গা এখন এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা। অসংখ্য উদাহরণের মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাটা না বললেই নয়, ২০ মার্চ রাতের ২টায় ফোন আসে এয়ারপোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফের কাছে। কান্না শুনে কিছুই না জিজ্ঞেস করে তিনি ঘুমের ঘোরেই রসিকতার ছলে বলেন, ‘ফ্লাইট মিস? কালকে অবশ্যই যাচ্ছেন, কান্না বন্ধ করে ঘুমান, আমারেও ঘুমাইতে দেন, গুডনাইট।’ ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ডায়াললিস্ট থেকে ওই প্যাসেঞ্জারকে ফোন করে ৯টার মধ্যে চেম্বারে আসতে বলেন।

ফেনীর দাগনভূইয়ার বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী জনাব জাহাঙ্গীর আলম কিছুদিন আগে কাতার এয়ারওয়েজের রিটার্ন টিকেট নিয়ে দেশে আসেন। গত ১৯ মার্চ রাত ২টায় ছিল তাঁর ফিরতি ফ্লাইট। দিনরাতের সময়ের হিসেব গড়মিল করে তিনি এয়ারপোর্টে আসেন পরদিন দুপুর ২টায়। ফ্লাইট মিস। দৌড়ে গেলেন তেজগাঁও কাতার এয়ারওয়েজের রিজার্ভেশন অফিসে। ‘নো শো চার্জ’ দিয়ে টিকেট রি-ইস্যু করতে। অফিসার সিস্টেম চেক করে বললেন, ‘আপনিতো ১৯ তারিখেই সৌদি চলে গেছেন!’

জাহাঙ্গীর হতবাক হয়ে বললেন, ‘আমি তো আপনার সামনে দাঁড়িয়ে, সৌদি গেলাম কিভাবে?’

অফিসারের সাফ জবাব, ‘কিচ্ছু করার নেই। আপনি চলে গেছেন অথবা আপনার নামে অন্য প্যাসেঞ্জার চলে গেছে। আপনি আপনার ট্রাভেল এজেন্সির সাথে কথা বলে নতুন করে টিকেট করে আসেন।’ মাথায় আসমান ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। হাতে কয়েকটা টাকা আছে মাত্র। থাকবে কোথায়, যাবে কোথায়..তার ওপর নতুন টিকেট কেনার টাকা! সৌদি এক আত্মীয়ের কাছে ফোন করলে জাহাঙ্গীরকে ফোন নম্বর দিয়ে এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের কথামতো ২১ মার্চ ৯টার মধ্যেই চেম্বারে জাহাঙ্গীর তাঁর চেম্বারে হাজির হয়।

ডাকা হয় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে। সমস্ত কাগজপত্র ও সিস্টেম পরীক্ষা করে দেখা যায় যে ওই দিন নির্ধারিত ফ্লাইটে জাহাঙ্গীর নামের দুই প্যাসেঞ্জার থাকায় এবং এই জাহাঙ্গীর অনুপস্থিত থাকায় তার টিকেটেই এয়ারলাইন্স অন্য জাহাঙ্গীরকে ভুলক্রমে বোর্ডিং পাস ইস্যু করে দেয়। নিয়ম অনুযায়ী টিকেটের নম্বর সিস্টেমে চেক করে নিলে এ ভুল হওয়ার কথা নাহ। ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে যে সিদ্ধান্ত দেন-

১) আজকের রাতের ২টার ফ্লাইটেই জাহাঙ্গীরকে সৌদি পাঠাতে হবে। ২) জাহাঙ্গীর নিজ কারণে প্রথম ফ্লাইট মিস করার জন্য যে ৬-৭ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়ে টিকেট রি-ইস্যু করতে হতো, তা নেওয়া যাবে না ৩) রাত ২টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরকে মানসম্মত হোটেলে থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে ৪) রিজার্ভেশন অফিসের যেসব কর্মকর্তা যাত্রীর সাথে প্রতারণা ও দুর্ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ৫) ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

অনলাইন এবং অন্যান্য সূত্রে খবর নিয়ে জানা যায় যে, বর্তমানে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে শরীফ মো. ফরহাদ হোসেন ও মুহাম্মদ ইউসুফ নামে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রায় দেড় বছর ধরে কর্মরত আছেন। এই দুই অফিসার যোগদানের পরই বদলে যেতে থাকে বিমানবন্দরের নানান অপরাধ এবং যাত্রী হয়রানির চিত্র। ‘Magistrates, All Airports of Bangladesh’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ রয়েছে এই ম্যাজিস্ট্রেটদের। এই পেইজে চোখ বুলালেই বোঝা যায়, অনলাইন সেবার বিভিন্ন প্রায়োগিক উদাহারণ! শত শত অভাবনীয় রিমিডি দিয়ে যাচ্ছেন তারা এই পেইজের মাধ্যমে। ইনবক্সের অভিযোগ পেয়ে এক বছর আগে হারানো লাগেজের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়ার মতো নজিরের বিশদ বর্ণনাও রয়েছে এই পেইজে।

খবর নিয়ে আরো জানা যায় যে, বিমানবন্দরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে পেইজটি আতঙ্কের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে পেইজটি বন্ধ করার জন্য নানান ষড়যন্ত্র ও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়।

এ প্রতিবেদক ফেসবুক পেইজে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে এক ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করে পেইজ নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের পেইজ এবং মোবাইল নম্বর প্রতিটি যাত্রীর কাছে আস্থা হিসেবে গড়ে উঠুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সেবা জনগণের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমরা কেবল আন্তরিকতার সাথে আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। কাজ করতে গেলে অনেক ধরনের সমালোচনা, বাধা আসবে। সেগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করে কাজ করতেই রাষ্ট্র আমাদের নিয়োগ দিয়েছে এবং সরকার বেতন দিচ্ছে। আমাদের কাজ আমরা করে যাবই, বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।’

দেশের যেকোনো বিমানবন্দরে যেকোনো বিপদে পড়লে 01787661166 এই নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুকে জানাতে চাইলে Magistrates, All Airports of Bangladesh

Untitled-1 copy(3)



মন্তব্য চালু নেই