কেমন আছে বাংলাদেশের নদী!

নদীমাতৃক বাংলাদেশ এখন নদী বিপর্যয়ের দেশ। গত এক হাজার বছরে বিলীন হয়ে গেছে এ দেশের দেড় হাজার নদী। এখন জীবিত আছে মাত্র ২৩০টি নদী। উজানে পানি কমে যাওয়ায় নদীগুলোর এমন দশা হয়েছে। এই হিসেবটি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)এর। আজ বিশ্ব নদী রক্ষা দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখেই এই পরিসংখ্যান বাপার।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর হিসাব অনুযায়ি বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন ৪০৫টি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী ১০২টি, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী ১১৫টি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী ৮৭টি, উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী ৬১টি, পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী ১৬টি এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী ২৪টি হিসেবে বিভাজন করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদনদীর মধ্যে অনেকগুলোই আকার এবং গুরুত্বে বিশাল। এসব নদীকে বড় নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।বৃহৎ নদী হিসেবে কয়েকটিকে উল্লেখ করা যায় এমন নদীসমূহ হচ্ছে: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি, শীতলক্ষ্যা, গোমতী ইত্যাদি।

বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী সুরমা। ৩৯৯ কিলোমিটার লম্বা। সবথেকে চওড়া যমুনা। দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র। বাংলাদেশের সব নদীর উৎপত্তি ভারত কিংবা তিব্বতে। একমাত্র সাংগু নদীর শুরু ও শেষ বাংলাদেশে। দেশের অর্থনীতিতে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। নদীর বয়ে আসা পলিমাটিতেই বাংলাদেশের কৃষিজমি অত্যন্ত উর্বর। কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে নদীই ভরসা। পরিবহণের তিন-চতুর্থাংশ নদীপথে। জলপথ ৫ হাজার ৬৩২ কিলোমিটার। বর্ষায় বেড়ে হয় ৮ হাজার ৪৫ কিলোমিটার। সেচ আর বিদ্যুতের জন্যও নদীর দরকার। নদীর মাছ শুধু দেশের অর্থনীতির স্তম্ভ নয়, বৈদেশিক মুদ্রাও এনে দেয়।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকাই শত শত নদীর মাধ্যমে বয়ে আসা পলি মাটি জমে তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট বলা হয়, এত নদী বিশ্বের মাত্র কয়েকটা দেশেই আছে। পলি জমে নদীগুলো ক্রমে অগভীর হচ্ছে। পানি ধরে রাখার ক্ষমতা কমছে বলে বন্যা বাড়ছে। সঙ্গতকারণে, সেদিকেই নজর দিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক । তাদের পরিকল্পনাও চূড়ান্তপ্রায়।

তারা নদীস্বাস্থ্য খতিয়ে দেখে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। প্রথমে শুরু হবে ড্রেজিং। প্রথম দফায় বিশ্বব্যাংক দেবে ৫০ কোটি ডলার। ড্রেজিংয়ের পদ্ধতিও পাল্টাবে। আগে যেখানে দরকার সেখানেই এটা হত। এবার নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এক একটি নদীর দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারা কম করে ছ’বছর ড্রেজিং করে নদীর রক্ষণাবেক্ষণে নজর রাখবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন করিডর, বরিশাল-চাঁদপুর, ঢাকা-আশুগঞ্জের নদীগুলোতে প্রথম দিকে ড্রেজিং শুরু হবে। তাতে ৫৩টি নদীপথের গভীরতা বাড়বে, সুগমও হবে।

যদিও ড্রেজিং একমাত্র সমাধান নয়। এর খরচও বেশি। আপাতত এই রাস্তাতেই প্রবাহ তীব্র রাখার পরিকল্পনা। নদী যথেষ্ট গভীর হলে গতিপথ পাল্টানোর শঙ্কাও কমবে। নদীর গ্রাসে কৃষিজমিও হারাবে না।

এবারের বিশ্ব নদী রক্ষা দিবসের প্রাক্কালে বাপার অভিযোগের আঙ্গুল সরকারের ডেল্টা প্ল্যানে। তাদের দাবী ‘ডেল্টা প্ল্যান নদীর জন্য এক অশনিসংকেত’।

তারা জানাচ্ছেন, বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে ১৩ ফুট পুরু পলিথিনের স্তর জমা হয়েছে। এগুলো অপসারণের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। নদীতে কারখানার ৬০ ভাগ বর্জ্য, ঢাকা ওয়াসা এবং সিটি করপোরেশনের ৩০ ভাগ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সরকারিভাবে নদী দূষণ করা হচ্ছে। নৌ-যানের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। বুড়িগঙ্গার সীমানা পিলার সম্পর্কে তারা বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে নদীর পিলার যথাস্থানে স্থাপন করা হয়নি। সীমানা পিলার স্থাপনের নামে তুরাগের ৫ কোটি ২৩ লাখ বর্গফুট জমি বেদখল হয়ে গেছে।

তাদের অভিযোগ, ঢাকার চারদিকের নদীর বিশাল আয়তনের জমি ছেড়ে দিয়ে ভুল স্থানে খুঁটি বসিয়ে দখলদারদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ একটি নদী রক্ষা কমিশনও গঠন করা হয়েছে। যার কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই, এর কাজই শুরুই হয়েছে হবিগঞ্জের সোনাই নদীর মধ্যে এক দখলদারের তৈরি বেআইনী ভবনকে বৈধ করার মধ্য দিয়ে।



মন্তব্য চালু নেই