‘বিষাক্ত প্রসাধনীতে ভরা বাংলাদেশের বাজার’

বাংলাদেশের যেসব প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগেই ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশর জন্য ক্ষতিকর বলে জানিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা।

এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশের নামীদামী ৩৩টি প্রসাধনী পণ্য পরীক্ষা করে সবগুলোয় ক্ষতিকর উপাদানের অস্তিত্ব পেয়েছে। হেয়ার জেল, বেবি লোশন, বিউটি ক্রিম, সহ বিভিন্ন প্রসাধনীতে আর্সেনিক সহ বিভিন্ন রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এমনকি এ শিশুদের জন্য ব্যবহৃত হয়, এমন প্রসাধনীতেও বিষাক্ত উপাদানের অস্তিত্ব রয়েছে বলে তারা সংস্থাটি জানিয়েছে।
শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে তাদের গবেষণার তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

বেসরকারি সংস্থা এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলছেন, ফেসওয়াশ, হারবাল ফেসপ্যাক, বেবি লোশন, রং ফর্সাকারী ক্রিমেই ক্ষতিকর উপাদানের অস্তিত্ব বেশি, যার মধ্যে বিষাক্ত ভারী ধাতু এবং ক্ষতিকর মাত্রায় রাসায়নিক রয়েছে

এসডো -এর নির্বাহী পরিচালক, সিদ্দিকা সুলতানা বলছেন, একেবারে জনপ্রিয় প্রসাধনীগুলোই আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, তার প্রতিটিতেই অন্তত একটি ক্ষতিকর উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ফেসওয়াশ, হারবাল ফেসপ্যাক, বেবি লোশন, রং ফর্সাকারী ক্রিমেই এসবের অস্তিত্ব বেশি। এর সবগুলোর মধ্যেই বিষাক্ত ভারী ধাতু এবং ক্ষতিকর মাত্রায় রাসায়নিক রয়েছে।

নামীদামী পণ্যগুলোর ক্ষেত্রেই যদি এই অবস্থা হয়, কমদামী অন্য পণ্যের ক্ষেত্রে অবস্থা কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়, বলছেন তিনি।
বাংলাদেশের সব প্রসাধনী পণ্যের দোকানেই এসব পণ্য বিক্রি হয়। কিন্তু সরবরাহকারী বা কোম্পানিগুলোর উপর আস্থা রাখা ছাড়া বিক্রেতা বা ক্রেতাদেরও এসব বিষয়ে খুব একটা সচেতনতা দেখা যায়না।

ঢাকার নিউমার্কেটের কয়েকজন বিক্রেতা জানালেন, আমদানিকারকরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসব পণ্য এনে তাদের কাছে সরবরাহ করেন। বিশ্বাস এবং আস্থার ভিত্তিতেই তারা এগুলো রেখে বিক্রি করেন। কিন্তু এর ভালো-মন্দ যাচাইয়ের তাদের কোন সুযোগ নেই।
কয়েকজন ক্রেতা জানালেন, তারা নামী পণ্য দেখে আস্থার কারণেই কিনে থাকেন। হয়তো একটি প্রসাধনী শরীরের জন্য ভালো হয় না, তখন আরেকটি কেনেন।

রূপ বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান বলছেন, প্রসাধনী পণ্য বাছাইয়ে সতর্ক হতে হবে
লিনা ইয়াসমিন নামের একজন জানালেন, তিনি চেষ্টা করেন ভালো দোকান থেকে পণ্য কেনার। কিন্তু পণ্যটি সত্যিই ভালো না খারাপ, সেটা যাচাইয়ের সুযোগ তো তার নেই।

এসডো বলছে, তারা দেশে ব্যবহৃত প্রধান প্রসাধনী পণ্যগুলো পরীক্ষা করে দেখেছেন। কিন্তু এর বাইরেও অনেক পণ্য বিক্রি হচ্ছে যার অনেকগুলোই অনুমোদিত নয়। এমনকি ভালো কোম্পানিগুলোর মোড়কে অনেক নকল পণ্যও রয়েছে বাজারে। কিন্তু এসব বিক্রি বাট্টা নিয়ন্ত্রণে তদারকি খুবই সামান্য। ফলে কম মূল্যের এসব প্রসাধনী সামগ্রী কিনে শারীরিকভাবে ক্ষতির হচ্ছেন ক্রেতারা। সব শ্রেণীর মানুষই এসব পণ্য কিনছেন এবং ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

বাংলাদেশের বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহকারীদের কাছ থেকে আস্থার কারণেই এসব পণ্য এনে বিক্রি করেন
কানিজ আলমাস বলছেন, অনেক সময় হয়তো ব্রান্ডের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সহজে ফর্সা হওয়ার জন্য কোন প্রসাধনীই আসলে ব্যবহার করা ঠিক না, কারণ সেটি ত্বক এবং শরীরের ক্ষতি করে। বিশেষ করে কমদানি কোন প্রসাধনী ব্যবহার করা একেবারেই ঠিক না। বরং ঘরে নানা ধরণের প্রসাধনী তৈরি করে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

কানিজ আলমাস বলছেন, ছেলে বা মেয়ে, যারাই সৌন্দর্য চর্চা করতে চাইবেন, তাদের প্রসাধনী সামগ্রী বাছাইয়ে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে।

এসডো জানিয়েছে, তারা এই প্রতিবেদনটি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে, যাতে তারা এসব বিষয়ে আরো কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেন। বিবিসি বাংলা



মন্তব্য চালু নেই