বলতে পারেন কোন ধরণের মায়ের পক্ষে এটি করা সম্ভব ?
নিজের দুই সন্তানকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছেন মা এটি কিভাবে সম্ভব! র্যাব বলছে জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাই-বোনের মা বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তা’থেকে তাদের খুন করেছেন তিনি।
র্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মা নিজের দুই সন্তানকে ঠান্ডা মাথায় নিজ হাতে খুন করেছেন, যা নজিরবিহীন। মাহফুজার মুখ থেকে শোনার পর তারও বিশ্বাস হচ্ছিল না।
দুই সন্তানের মা মাহফুজা মালেক ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধে তাদের হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন র্যাবের কাছে। কিন্তু তিনি প্রচার করেন নুসরাত আমান অরণী (১২) এবং আলভী আমান (৭) খাবারের বিষক্রিয়া মারা গেছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, ২৯ ফেব্রুয়ারি মেয়ে অরণীর গৃহশিক্ষক চলে যাওয়ার পর বাবা-মার বেড রুমে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সে ঘুমাতে যায়। মা মাহফুজাও ছেলের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় বাসায় বৃদ্ধা দাদি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। অরণী বিছানায় শোয়ার কিছু সময় পর মাহফুজা তাকে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ধরেন। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তারা বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে যান। কিছু সময় পর মেয়ের শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে তিনি তার ছোট ছেলে আলভীকেও একইভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি লাশ দুটির সামনে কিছু সময় ধরে কান্নাকাটি করেন।
এরপর স্বামী আমান উল্লাহকে ফোনে ছেলে-মেয়ে কেমন করছে বলে জানান। স্বামীর বাসায় ফিরতে দেরি হবে জেনে তার মা ও বোন মিলাকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
এরপর দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমানোর পর সন্তানরা ঘুম থেকে ওঠেনি এবং খাবারের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করেন।
এরপর তিনি স্বামীকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। হাসপাতাল থেকে সন্তানদের লাশও তারা গ্রহণ করেননি। তারা গ্রামের বাড়ি জামালপুরে সন্তানদের লাশ দাফন করতে গেলে র্যাব গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে ওই মাকে একজন মানুষ বলা যাবে না। তিনি একটি জীব। জীবের মায়া-দয়া থাকে না। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান বলেন, শুনেছি মা সন্তানদের হত্যা করেছে। যখন তাদের হত্যা করা হয়, তখন তারা বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু অবুঝ দুটি শিশুর সে চেষ্টা ওই মাকে দমাতে পারেনি। এটি সব ধরনের মানবাধিকারকে হার মানিয়েছে। শিশু দুটির মৃত্যু যন্ত্রণা তাকেও ব্যথিত করেছে। শিশুদের নিরাপত্তায় রাষ্ট্রকে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মাহফুজা মালেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, র্যাবের এমন একটি সূত্র বলছে, গত ৬ মাস ধরে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নিয়ে মাহফুজা চিন্তা করতে থাকেন। ওই সময় থেকে তাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ওই সময়ে তিনি দুই বার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন। উচ্চ শিক্ষিত মাহফুজা এক সময় শিক্ষকতা করেছেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করার জন্য তিনজন শিক্ষক রেখে দেন। শিক্ষকদের বেতন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। পুরো পরিবারের তিনিই ছিলেন নিয়ন্ত্রক।
মাহফুজা প্রথমে হত্যার ঘটনা স্বীকার করতে চাননি। পরে ভয়, মানসিক, মানবিক দিক তার সামনে উপস্থাপন করা হলে ঘটনার বিস্তারিত বলেন। তিনি নিজেকে সব সময়ই বাঁচাতে চেষ্টা করেছেন।
রামপুরা থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সোলায়মান মোল্লা বলেন, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হতাশা থেকে মাহফুজা এ কাজ করেছেন, নাকি এর পেছনে আরও কিছু আছে- তা খতিয়ে দেখা হবে।
মন্তব্য চালু নেই