২৬ বছর পর তরুণদের প্রচেষ্টায় শহীদ মিনারে ফুল
এখনো বাংলাদেশে এমন অঞ্চল আছে যেখানে বলা হয়, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াটা হারাম। এটা পূজা করার শামিল। মুসলমানদের জন্য এটা কবিরা গুনাহ!
এলাকাটি হলো পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর। সেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেই কোন স্থায়ী শহীদ মিনার।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর খিদিরপুরের শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয়ে হঠাৎ সুর ওঠে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হারাম, এটা পূজা করার শামিল। কবিরা গুনাহ হবে, হিন্দুদের মত পুজা করা যাবে না।
শিক্ষকদের এসব কথা শিরোধার্য করে কবিরা গুনাহের অজুহাতে ধ্বংস করা ভেঙে ফেলা হয় ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন। ওই শিক্ষকরা পেয়ে যান আরেকটি ছুটির দিন। সেই থেকে আর এই স্কুলে ভাষা শহীদদের স্মরণে কোন অনুষ্ঠান পালন হতে দেখা যায় না।
এ বিষয়ে খিদিরপুরের শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, “এখানে কোন শহীদ মিনার নাই। সেই ’৯০ এর দশকে আমাদের মাতৃভাষা দিবসকে মুছে ফেলা হয়েছে।”
খিদিরপুরের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খানও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “অনেক আগে থেকেই আমাদের এখানে কোন স্থায়ী শহীদ মিনার নেই। স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরির জন্য ওপর মহলে বারবার আবেদন করেও কাজ হচ্ছে না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে, আলোচিত স্কুলের ৯৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না।”
‘নিউক্লিয়াস গ্রুপ’ নামের একটি অনলাইন সংগঠনের পক্ষ থেকে রেজওয়ান শ্রাবন জানান শনিবার রাতে ওই স্কুল মাঠে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরী করার উদ্যোগ নেয়া হয় আমাদের পক্ষ হতে।
গ্রুপের টপ এডমিন সাকিব রাদিতুল্লাহ্,মুহায়মিন, এবং গ্রুপটির টেকনিক্যাল সাপোর্ট এর এন এইচ ডালী ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে সিনিয়র সদস্য মামুন কে দিয়ে স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে শনিবার দিবাগত রাত ১২:৩০ মিনিট হতে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরীর কাজে হাত দেন।
ভোরে ওই শহীদ মিনারেই ভাষা শহীদ প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন সাধারণ মানুষ।
নিউক্লিয়াস গ্রুপের এক্টিভিষ্ট ফারুক রেজা ও রুবেল বলেন, “এতো পরিশ্রমের পর যখন এই দৃশ্যটি চোখে পড়ে তখন সত্যিই আবেগ আর ধরে রাখা যায় না। যদিও আজ বিয়োগান্তক দিন তবুও আমাদের সবার চোখে আনন্দের অশ্রু। আমরা সফল ভাই।”
মন্তব্য চালু নেই