গরিব আর এতিমের শিক্ষা ব্যবস্থা হলো মাদরাসা
অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা তিন শ্রেণির। এর মধ্যে মধ্যে গরিব আর এতিমের শিক্ষাব্যবস্থা হলো মাদরাসা। সেই মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। যার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আলিয়া এবং দুই তৃতীয়াংশ কওমি। কওমি মাদরাসার একটা বড় অংশ জঙ্গি ও মৌলবাদী হিসেবে তৈরি হয়। যারা তৈরি হয় তারাও গরিব লোকের সন্তান।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ : কোন পথে আমরা?’ শীষর্ক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সব সাম্প্রদায়িকতার শিকড় ধর্মের মধ্যে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হতাশা ও নিরাশার মধ্য দিয়ে খুব সহজেই ধর্ম নামক বিষয়টি ঢোকে। প্রচলিত বৈষম্য, ক্রমাগত বৈষম্য, বুদ্ধিষ্ট বৈষম্য এবং কিছু মানুষের অঢেল সম্পত্তি সবই এখানে। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে ১০ হাজার ১২৪টি ধর্ম আছে।’
জঙ্গিবাদের অর্থায়ন নিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘একটা ত্রিভুজের মাথায় আছে জামায়াতে ইসলাম, তার বাম দিকে আছে ১৩২ টি জঙ্গি সংগঠন এবং নিচের মাথায় আছে মৌলবাদের অর্থনীতি। সেখানে আছে ২৩১ টি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই জামায়াতের মূল অর্থায়নে আছে ইসলামী ব্যাংক। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই একমাত্র ব্যাংককে জঙ্গিবাদের অর্থায়ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অথচ আপনারা সেই ইসলামী ব্যাংকের টাকা নিয়ে বিশ্বকাপ করলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে অর্থমন্ত্রীর কাছে পত্র দিয়ে ছিলাম যে, আমরা রাষ্ট্রীয় ব্যাংক মিলে ৪০ কোটি টাকা দেবো। তিনি শুধু টেলিফোনে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
তার মতে, আমাদের অর্থনীতি দুর্বৃত্তদের অধীনে চলে গেছে। দেশের প্রায় ৮৬ ভাগ সম্পদ এক শতাংশ মানুষের হাতে। দখলবাজরা রাষ্ট্রের মালিক, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক এবং রাজনীতির মালিক হয়েছেন। তারা এখানেও চাঁদা দেন, ওখানেও চাঁদা দেন।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে ৫০ কোটি দেন আর বিএনপি আসলে ১০ কোটি দেন।
আবুল বারকাত বলেন, ‘অর্থনীতি ও রাজনীতি যখন দুর্বৃত্তায়ন হয়, তখন বৈষম্য বাড়ে। আমাদের দেশে ১০ কোটি ৫০ লাখ অর্থাৎ ৬৬ ভাগ দরিদ্র। নিম্ন মধ্যবিত্ত ১৮ ভাগ। এই মিলে ৮৪ ভাগ মানুষ বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে দরিদ্র।’
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অথচ আপনারা দারিদ্র ২৫ ভাগ বলেন। সরকারমাত্রই তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলে। তাদের বলতে হয়। কারণ- আগের সরকার যদি বেশি দেখায় তাহলে তাদের হিসাবও বেশি করতে হবে। যেমন আগের সরকার যদি দারিদ্রতা ৩০ ভাগ বলে যায় তাহলে এই সরকারকে তার কম বলতে হবে। হোক আর না হোক তাদের বলতেই হবে। যাকে বলে পরিসংখ্যান ভিত্তিক অর্থনীতি। সরকার আসলে দারিদ্রের হিসাব করে গরু-ছাগল পদ্ধিতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোপথে আমরা, ভুল পথে আমরা, মহাবিপর্যয়ের পথে আমরা, গাঢ় অন্ধকারের পথে আমরা। এই পথ থেকে ফিরে আসতে হলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যদি বলেন, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। আমার উত্তর হ্যাঁ। যদি বলেন, আপনার নেতা আছে কিনা, গায়ে জোর আছে কিনা, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন কি না- সেটা সময় বলে দিতে পারবে।’
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক অজয় রায়ের সভাপত্বিতে আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক ছাত্র নেতা মোস্তাক হোসেন, ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই