১৩০ তলা টাওয়ার হচ্ছে ঢাকায়!
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পূর্বাচলের ১৯নং সেক্টরের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি) এলাকায় নির্মিত হবে ১৩০ তলা উচ্চতার ‘কেপিসি বেঙ্গল টাওয়ার’। এ ভবনের সম্ভাব্য উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ১৪৫ ফুট। কাজটি দ্রুত করতে গত ২০১৫ সালের ১৩ই ডিসেম্বর একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম গঠন করেছে রাজউক। টাওয়ারটি নির্মিত হলে এটি হবে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ও বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ভবন।
এরই মধ্যে ভবনটি নির্মাণের প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। পূর্বাচলে নির্মিতব্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ভবনটিতে থাকবে আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও এক্সিবিশন সেন্টার।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন নির্মিত হচ্ছে সৌদি আরবের জেদ্দায়। দুই’শ তলা এই ভবনের উচ্চতা হবে ৩ হাজার ২৮০ ফুট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন ২০১০ সালে নির্মিত হয়েছে দুবাইয়ে। ১৬৩ তলা এই ভবনের উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট। এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য সুউচ্চ ভবনের মধ্যে রয়েছে সাংহাইয়ের ১২৩ তলা সাংহাই টাওয়ার এবং সৌদি আরবের মক্কায় ১২০ তলা মক্কা রয়াল ব্যাংক টাওয়ার। প্রতিবেশী দেশ ভারতের মুম্বইতে ১১০ তলা একটি ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান।
বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স হিসেবে ঢাকার ভবনই হবে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ ভবন। এছাড়া, উচ্চতা ও আয়তনের দিক দিয়ে এটি হবে বিশ্বের সর্বোচ্চ তৃতীয় বৃহত্তম ভবন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে রাজউকের পক্ষ থেকে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তার মাধ্যমে ভবনটি নির্মাণে সার্বক্ষণিক তথ্য সরবরাহ, যোগাযোগ ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এজন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে ভবনের প্রযুক্তিগত সকল দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা যাবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ ভবন নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ তদারকি করবে। সরকার ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে ভবনটি নির্মাণের চিন্তা করা হচ্ছে।
ভবনটি নির্মাণে অর্থ বিনিয়োগের জন্য এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপ আগ্রহ দেখিয়েছে। এ কারণে রাজউক ফোকাল পয়েন্টকে সহযোগিতার জন্য চার সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে। ওই টিমে সদস্য হিসেবে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পশ্চিম) মোহাম্মদ মনিরুল হক, নগর পরিকল্পনা শাখার উপ- নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ নূর-ই- খোদা, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া এবং উপ-পরিচালক (অর্থ) মো. জামাল উদ্দিনকে রাখা হয়েছে।
এর আগে কেপিসি গ্রুপ গত ৮ই অক্টোবর অর্থমন্ত্রী বরাবরে লেখা চিঠিতে আগামী ২০১৭ সালের মধ্যেই টাওয়ারটি নির্মাণকাজ শেষ করতে সরকারের সহযোগিতা চান। এরপরই অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় জমি হস্তান্তর, প্রকল্পটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে ও প্রকল্পে কি কি থাকবে তা নির্ধারণে পুরোদমে প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয় রাজউক। এরপর ২৮শে নভেম্বর ভবনটির নির্মাণকাজ অতিদ্রুত শুরু ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের ফর্মুলা ঠিক করতে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গণপূর্ত সচিব মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ, রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়াসহ রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রস্তাবিত কনভেনশন সেন্টার ও এক্সিবিশন সেন্টারের নকশাসহ বিভিন্ন বিষয় পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচলে বিশেষ বিনিয়োগের জন্য সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি) এলাকায় মোট ২৪৫ দশমিক ১২ একর জমি রাখা হয়েছে। ওই এলাকায় বিদেশি বিনিয়োগে বৃহৎ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোট ৯৫ একর জমি চায়।
পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে মোট ৫৬ একর জমিতে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি তাদের মতামতে জানায়। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির জন্য ৫৬ দশমিক ৩ একর জমির প্রয়োজন হলেও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনে ৬০ একর জায়গা দিতে চায় সরকার। যদিও সম্পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও বেশি জমির চাহিদা রয়েছে। সরকার পূর্বাচলে বিভিন্ন সংস্থার বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে সয়েল টেস্ট করেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা কেরানীগঞ্জের পরিবর্তে পূর্বাচলকেই বেছে নিয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই