সরকারি চাকুরেদের বয়স দুই বছর বাড়ছে

সরকারি চাকুরেদের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে একটি প্রস্তাব আগামী সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে উঠছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বুধবার মন্ত্রিপরিষদ-সচিবের কক্ষে কয়েকটি মন্ত্রণালয়েরে সচিবদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বর্তমানে অবসরের বয়সসীমা মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের ৬০ ও অন্যদের ৬৯ বছর।

সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিরত মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করে একটি প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে, যা মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া সাধারণ সরকারি কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬১ বছর করার আরেকটি প্রস্তাবও মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এদিকে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করার নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় প্রকাশ করেন।

হাইকোর্টের রায়ের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, আইন সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জনপ্রশাসন-সচিব দফায় দফায় বৈঠক করেন।

গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ-সচিবের কক্ষে এক বৈঠকে সচিবরা সরকারি চাকরিরত মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ এবং সাধারণ সরকারি চাকুরেদের বয়সসীমা ৬১ বছর করার প্রস্তাব নিয়ে একমত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তারা চান বিজয়ের মাস এই ডিসেম্বরেই বয়স বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত হোক। তাহলে বছর শেষে যাদের পিআরএলে যাওয়ার কথা, তারাও এ সুবিধা পাবেন। এ রকম কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা বয়স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করছেন।

হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সরকারি সব চাকরিতে তাদের বয়সসীমা ৬৫ বছর করা উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে রাষ্ট্রকে অবশ্যই বিশেষ ছাড় দিতে হবে। তাই দ্রুত এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাস করা উচিত।

এর আগে সরকারি চাকরি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও। রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ গত ১৬ নভেম্বর ওই আদেশ দেন।

আদালতে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, এ এম আমিন উদ্দিন ও শেখ ফজলে নূর তাপস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

২০০৬ সালের ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই নির্দেশনা প্রতিপালন না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন শিকদার ২০১৩ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। পরে আরও ৬৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা ওই রিট আবেদনে পক্ষভুক্ত হন।

আইনসচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জনপ্রশাসন-সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ওই আবেদনের রায়ে হাইকোর্ট বলেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে বিবাদীদের ওই প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করতে হবে। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে নিয়মিত আপিলের আবেদন করতে বলেন। গত ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল আবেদন করে। পরে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আবেদনটি নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ।



মন্তব্য চালু নেই