পে-স্কেল গেজেট : প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কঠোর হস্তেক্ষেপ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের বহুল প্রতিক্ষিত অষ্টম বেতন কাঠামোর আদেশ জারি হতে আরো বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বার্থন্বেষি একটি মহল তাদের স্বার্থে নানা অজুহাতে বেতন কাঠামোর আদেশ জারিতে বিলম্ব করছে। এ অবস্থায় চাকরিজীবীরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
সূত্র জানায়, একটি মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু কর্মকর্তার সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল চলতি মাসের শেষের দিকে এবং আগামী জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। তারা যাতে ওই সুযোগ পেতে পারেন সে জন্য নানা অজুহাতে ভেটিংয়ে বিলম্ব করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এর আগে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন বেতন আদেশের প্রজ্ঞাপন হওয়ার তারিখ পর্যন্ত চাকরিজীবীরা সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলের সুবিধা পাবেন। গেজেট হওয়ার তারিখ থেকে এ সুযোগ বাতিল হবে। এ সুযোগ ইতোমধ্যে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়েছেন। অষ্টম পে-স্কেলের ভেটিং আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত টেনে নিতে পারলে ওই কর্মকর্তারা এ সুযোগ পাবেন। এ ইচ্ছা থেকে তারা ভেটিংয়ে কালক্ষেপণ করছেন।
জানা গেছে, গত বুধবার ভেটিং না করে নতুন কিছু সুপারিশসহ আইন মন্ত্রণালয় থেকে পে-স্কেলের ফাইল অর্থমন্ত্রীর কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রনালয়ের ওই সুপারিশ পে-স্কেলে সংযোজন করা হলে নতুন করে আবার জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ অবস্থায় পে-স্কেলের গেজেট হতে আরো দেরি হবে। অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী তার ঘোষিত সময়ে সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন পে-স্কেল গেজেট করতে পারছেন না।
সূত্র জানায়, ড. ফরাস উদ্দিনের নেতেৃত্বে গঠিত অষ্টম পে-কমিশন টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে। একই সঙ্গে কমিশন সরকারি চাকরিজীবীদের বর্তমান ২০টি গ্রেড থেকে কমিয়ে ১৬টি গ্রেড করার সুপারিশ করে। কিন্তু সচিব কমিটি পে-কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশে সংশোধন আনে। এর মধ্যে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ার সুপারিশ বহাল রাখলেও সচিব কমিটি পে-কমিশনের ১৬টি গ্রেডের সুপারিশের পরিবর্তে ২০টি গ্রেড বহাল রাখার সুপারিশ করে। চূড়ান্ত পর্যায়ে সেটাই বহাল রাখা হয়।
সূত্র জানায়, পে-কমিশন ও সচিব কমিটির সুপারিশের পরও কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ বিভিন্ন পেশাভিত্তিক সংগঠন টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখাসহ নানা ধরনের দাবি তুলে ধরে। বিশেষ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠনগুলো বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে। এরই ধারাবহিকতায় অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। কমিটিকে সহায়তা করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, অর্থসচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়/বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব/ভারপ্রাপ্ত সচিবদের রাখা হয়। কমিটি দুটি বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। সে সময় বলা হয় সবার কাছে গ্রহনযোগ্য একটি পে-স্কেল দেওয়া হবে। খুব শিগগির পে-স্কেলের গেজেট হবে। এরপর প্রায় একমাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো পে-স্কেল নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।
সূত্র জানায়, বেতন বৈষম্য দূরীকরন কমিটির সুপারিশসহ পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রণালয় পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করে গত ২৭ নভেম্বর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রনালয়ে পাঠায়। যেহেতু মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনসহ প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে সেহেতু ভেটিংয়ের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে না।
সে হিসেবে অর্থমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই বেতন আদেশের প্রজ্ঞাপন হয়ে যাওয়ার কথা। এ বিষয়ে গত ২ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন, আমি তো গত কাল (১ ডিসেম্বর, সোমবার) থেকেই ফাইলটির জন্য অপেক্ষা করছি। এবারের পে-স্কেল এত জটিল করা হয়েছে যা আগে কখনো হয়নি। কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যে কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার পে-স্কেল নিয়ে বেশ কিছু জটিলতার কথা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ সময় অর্থমন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকা সিলেটে ছিলেন। অর্থমন্ত্রী সেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপন হবে বলে ঘোষণা দেন।
সচিব কমিটির সুপারিশের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হয়ে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে গত ২৭ নভেম্বর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং না করে কিছু পরামর্শসহ তা অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় ওইসব পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হলে কালক্ষেপণ হবে। এতে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চলতি সপ্তাহের মধ্যে বেতন আদেশ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন বিভাগ সব প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত পে-স্কেলে কর্মচারীদের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প প্রস্তাব ১০ বছর পর একটি এবং ১৫ বছর পর আর একটি গ্রেড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। অথচ কর্মকর্তাদের বেলায় ৩, ৪, ৫, ১০ বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন স্কেল প্রবর্তন করা হবে। এমন সংবাদে সচিবালয়ের কর্মচারীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে কর্মচারীদের সংগঠনগুলো আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। যদিও এ প্রস্তাবটি মূল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। গেজেট হওয়ার পর কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা এসব সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানতে পেরে কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আর এটাকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষি মহল গেজেট প্রকাশে প্রচ্ছন্ন বাধার সৃষ্টি করছে।রাইজিংবিডি
মন্তব্য চালু নেই