চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ৩ পরিবারের ভিন্ন তথ্য
রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে তিনজনকে অস্ত্রসহ আটক করার দাবি করেছে র্যাব। র্যাব-৫ এর বক্তব্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের স্বজনরা জানিয়েছেন, এক মাস আগেই তাদের আটক করা হয়েছিল।
আটককৃতরা হলো- রংপুরের কোতোয়ালী উপজেলার শালবন শাহীপাড়ার মো. হানিফের ছেলে রাজিব হোসেন ওরফে মেরিল সুমন (২৫), একই উপজেলার সেন্ট্রাল রোড জুম্মাপাড়ার আবদুল লতিফের ছেলে নওশাদ হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে কালা রুবেল (২৭), এবং শালবন মিস্ত্রীপাড়া শিয়ালুর মোড় গ্রামের বাবলু চন্দ্র বর্মনের ছেলে কাজল চন্দ্র বর্মন ওরফে ভরসা কাজল (২৫)।
র্যাব-৫ রাজশাহীর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুব আলম জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে পৌর এলাকার সাতনইল মহল্লায় সন্দেহজনকভাবে এক ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। ওই ব্যক্তি র্যাবের গাড়ি দেখতে পেয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে।
এ সময় র্যাবের একটি টহলদল রাজিব হোসেনকে আটক করে। র্যাব তার কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী র্যাব পৌর এলাকার বিদিরপুর মহল্লায় অভিযান চালিয়ে নওশাদ হোসেন ও কাজল চন্দ্র বর্মনকে রাত সোয়া তিনটার দিকে আটক করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী রিভলবার ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তারা পলাতক ছিল এবং তারা বিভিন্ন সময় জায়গা পরিবর্তন করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানিয়েছে। ওই র্যাব কর্মকর্তা জানায়, সুমনের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৮টি মামলা, কালা রুবেলের বিরুদ্ধে ২টি হত্যা মামলা এবং কাজলের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে রংপুরে। শুক্রবার তাদের চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর থানায় সোপর্দ ও তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে বলে র্যাব জানায়। চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাযহারুল ইসলাম জানান, র্যাবের হাতে আটক তিনজনকে অস্ত্র মামলাই চাঁপাই নবাবগঞ্জ আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
ওদিকে, কুনিও হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে রাজীব হাসান ওরফে মেরিল সুমন, নওশাদ হোসেন রুবেল ওরফে কালা রুবেল, কাজল চন্দ্র বর্মন ওরফে ভরসাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় রংপুরে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মেরিল সুমনের পিতা শালবন শাহীপাড়ার বাসিন্দা মো. হানিফ অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে সুমনকে গত ৫ই অক্টোবর দিনাজপুর থেকে রংপুরে আসার পথে হাজীপাড়া এলাকায় দুটি মাইক্রোবাস যোগে ২০-২২ জন র্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা তাকে আটক করে।
এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলেন আমরা র্যাবের লোক। এই বলে তারা সুমনকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা রংপুর কোতোয়ালী থানা ও র্যাব-১৩, ডিবি, সিআইডি অফিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে খোঁজ খবর নিলে তারা জানান কেউ তাকে গ্রেপ্তার করেনি।
সুমনের সন্ধান না পেয়ে তার বাবা জানায় ৭ই অক্টোবর রংপুর প্রেস ক্লাবে মেরিল সুমনের খোঁজ নেই এমন স্লোগানের ব্যানার নিয়ে পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসীরা মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। যা পত্রিকাতেও সংবাদ পরিবেশন হয়েছে।
এরই মধ্যে দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করে জানতে পারি সুমনকে চাঁপাই নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে র্যাব অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে। যা সত্য নয়। একই অভিযোগ করে জুম্মাপাড়ার রুবেলের পিতা আবদুল লতিফ বলেন, জাপানি নাগরিক হত্যা ঘটনার দুই মাস আগ থেকে রুবেল তার রাজশাহীর বিনোদপুর শ্বশুরবাড়িতে থাকতো। জাপানি নাগরিক হত্যার পরই গত ১১ই অক্টোবর রাজশাহী থেকে সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে রুবেলকে।
এরপর থেকে রুবেলের আর কোন খবর মেলেনি। হঠাৎ করে জানতে পেরেছেন তাকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। তিনি এ খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অপরদিকে মিস্ত্রিপাড়া এলাকার কাজল চন্দ্র বর্মন ওরফে ভরসার পরিবারের দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত মাসে বাসা থেকে ভরসাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার খোঁজ আর মেলেনি।
হঠাৎ করে তিনি সকলের মুখে জানতে পারেন তার পুত্রকে অস্ত্রসহ চাঁপাই নবাবগঞ্জের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। যদি চাঁপাই নবাবগঞ্জে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে তাহলে এক মাস আগে যারা বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারা কারা। এ প্রশ্ন উল্টো সাংবাদিকের কাছে।
মন্তব্য চালু নেই