গায়ে অন্তত ৩০ মিনিট রোদ লাগান ভালো থাকুন
সূর্যের আলো ত্বকে পড়ার পর আমাদের ত্বক দেহের মধ্যেই ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে। ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোনও, যা ক্যালসিয়াম শোষণ ও বিপাককে নিয়ন্ত্রণ করে, হাড়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে। স্থানভেদে বিশ্বের ৪৫ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ এ মুহূর্তে ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভুগছে। এর ফলে যে কেবল হাড় ক্ষয়, ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি হতে পারে তা নয়, ইদানীং বলা হচ্ছে যে এ কারণে বাড়তে পারে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার এবং আরও কিছু গুরুতর রোগের ঝুঁকি।
কেন অভাব?
সূর্য তো আলো দিয়ে যাচ্ছে অকৃপণভাবে, তবু কেন ভিটামিন ডি-এর অভাব? কারণ সূর্যালোক থেকে ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে নানা কিছু। যেমন বয়স, ত্বকের রং, বসবাস স্থল ও উচ্চতা, মৌসুম, বায়ুদূষণ, আকাশে মেঘের ঘনঘটা এমনকি বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের প্রভাব। বয়স যত বাড়ে, ভিটামিন ডি উৎপাদন করার ক্ষমতা তত কমে, তার ওপর বয়স্করা তেমন বাইরেও যান না। শিশুদেরও একই অবস্থা। তাই ছয় মাস থেকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশু ও ৬৫-ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি। শ্যামবর্ণের মানুষের ত্বকে সূর্যালোক প্রবেশ করতে সময় নেয় বেশি। আফ্রিকা, ক্যারিবীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ তাই একটু বেশি ঝুঁকিতে আছে। ধারণা করা হয় যে বায়ুদূষণ ও ওজোন স্তরের তারতম্যের কারণে ঢাকা বা মুম্বাইয়ের মতো ব্যস্ত শহরের অধিবাসীরা বেশি করে এ সমস্যায় ভুগছেন। ভিটামিন ডি সবচেয়ে ভালো তৈরি হয় যে সময়টায়, বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত, এই সময়টা বেশির ভাগ মানুষের কাটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস কক্ষে বা স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষে। ইট-কাঠের এই জঞ্জালে বেশির ভাগ বাড়িতেও নেই রোদ পোহানোর উঠান বা বারান্দা, জানালার বাইরেই হয়তো আরেকটি জানালা।
তাহলে কী করবেন?
—শরীরে প্রতিদিন খানিকটা রোদ লাগানো দরকার। কিন্তু ঠিক কতটা? কেননা অতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মিও খারাপ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শ্বেতাঙ্গদের জন্য দৈনিক অন্তত ১৫ মিনিট সূর্যের আলো মাখা উচিত, তবে শ্যামবর্ণদের জন্য আরেকটু বেশি হলেই ভালো। আমাদের দেশে বিরতি দিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট গায়ে রোদ লাগান।
—শিশুদের দিনে বাইরে খেলাধুলা বা ঘরের বাইরে হাঁটাচলায় উৎসাহিত করুন।
—কিছু খাবারেও ভিটামিন ডি আছে, তবে অল্প। ডিমের কুসুম, কলিজা, দুধ ও দই, কমলার রস এবং মাছে কিছু ভিটামিন ডি পাবেন। বর্তমানে ভিটামিন ডি যুক্ত দুধ পাওয়া যায়।
—অনেকেই ভিটামিন ডি বড়ি বা সাপ্লিমেন্ট খান। তার আগে রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা আসলেই কম কি না, দেখে নেওয়া উচিত। কেননা রক্তে এর মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়াটাও বিপজ্জনক।
ডা. তানজিনা হোসেন, এন্ডোক্রাইন ও মেটাবলিজম বিভাগ বারডেম হাসপাতাল
মন্তব্য চালু নেই