‘সরকারকে চাপে ফেলতেই তাবেলা হত্যা’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সরকারকে চাপে ফেলতেই ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যা করা হয়েছে। তাবেলা হত্যায় জড়িত তিনজনসহ আটককৃত চারজন এ কথা স্বীকার করেছে।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ডিবির একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাবেলা হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনসহ মোট চারজনকে আটক করে।

আটককৃতরা হলেন- রাসেল চেধুরী ওরফে চাকতি রাসেল। তাকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তানজিল আহমেদ রাসেল ওরফে মোবাইল রুবেল ওরফে শ্যুটার রুবেল। তাকে বাড্ডা এলাকা থেকে আটক করা হয়। মিনহাজুল ইসলাম রাসেল ওরফে ভাগ্নে রাসেল ওরফে কালা রাসেল। তাকেও বাড্ডা এলাকা থেকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে মানিকের গ্যারেজ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।। তাই মানিকেও গ্রেফতার করা হয়। মোটরসাইকেলটি সাখাওয়াত হোসেন শরীফ নামের এক ব্যক্তির। তার কাছ থেকে অভিযানের কথা বলে ভাগ্নে রাসেল মোটরসাইকেলটি ধার নেয়।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ভাগ্নে রাসেল ও চাকতি চৌধুরী নেশাসক্ত। তারা বিভিন্ন মামলায় কয়েকবার কারাভোগ করেছে এবং এখনো তাদের নামে অনেক মামলা রয়েছে। ঠান্ডা মাথার খুনি হিসেবে রুবেলের অতীত রেকর্ড রয়েছে। তাদেরকে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জানা যায়।

আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, ভাগ্নে রাসেল প্রথম গুলশানের ৯০ নম্বর রোডে যান। পরে চাকতি রাসেল ও রুবেল ভাগ্নে রাসেলের সঙ্গে একত্র হন। ভাগ্নে রাসেল তাবেলা সিজারকে চাকতি রাসেল ও রুবেলকে দেখিয়ে দেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের জন্য এক কথিত ‘বড় ভাই’ ভাগ্নে রাসেল, চাকতি রাসেল ও শ্যুটার রুবেলকে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকায় ভাড়া করেন। ঘটনার আগেই অর্ধেক টাকা পেমেন্ট করা হয়। বাকি অর্ধেক টাকা ঘটনার পর দেওয়ার কথা ছিল। তবে কথিত বড় ভাই এখনো টাকা পরিশোধ করেননি। পুলিশ সেই কথিত বড় ভাইকে খুঁজছে। বড় ভাইয়ের পেছনে কারা আছে, সেটিও জানার চেষ্টা করছে। বড় ভাই গ্রেফতার হলে সেটি জানা যাবে।

তিনি বলেন, ‘এখানো পর্যন্ত আমরা এ হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাইনি। হত্যার পর আই্এসের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। আসলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও সরকারকে চাপে ফেলার জন্যই তাবেলা সিজারকে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো টার্গেটেড খুন ছিল না।’

ভাগ্নে রাসেলকে গত ১০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজন উঠিয়ে নেয়, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশের তৎপরতা দেখে ভাগ্নে রাসেল পলাতক থাকতে পারে। পুলিশ তাকে গতকাল রোববার গ্রেফতার করেছে এবং আজ আপনাদের সামনে হাজির করা হয়েছি।’

tagfvd

উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে তাবেলা সিজার জগিং করার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনাস্থলের পাশে আগে থেকেই মোটরসাইকেলে একজন যুবক বসে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর আরো দুই যুবক দৌড়ে আসেন। ওই দুজন মোটরসাইকেলে চড়তেই একজন তাবেলাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। তিন রাউন্ড গুলি করে মোটরসাইকেলে চড়ে সৌদি দূতাবাসের দিকের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তাবেলাকে উদ্ধার করে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ইতালিয়ান নাগরিক নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আইসিসিও নামের একটি এনজিওতে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি এ বছরের মে মাস থেকে ঢাকার গুলশানে একা বাস করতেন। পাশাপাশি তিনি গুলশানে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সুইমিং শিক্ষক হিসেবেও কাজ করতেন।

গত ১৪ অক্টোবর তাবেলার লাশ ইতালি দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেদিন রাতেই বিশেষ বিমানে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার লাশ ইতালি নেওয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই