পালকিতে চড়ে বিদায় নিলেন দুর্গতিনাশিনী
এবার দেবী দুর্গা পৃথিবীতে এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে। আর স্বর্গে স্বামীগৃহে ফিরলেন পালকিতে চড়ে। যার ফলাফল শস্যহানি ও দুর্ভোগ। আজ শুক্রবার বিকালে ঢাকের বাদ্য আর সিঁদুর খেলা শেষে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘কৈলাসে দেবালয়ে’ ফিরলেন ‘দুর্গতিনাশিনী দেবী’। শেষ হল বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় পার্বণ শারদীয় দুর্গোৎসবের।
দশ দিন আগে মণ্ডপে মণ্ডপে মহালয়ায় এ উৎসবের সূচনা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মধ্য দিয়ে ঘটে দুর্গা পূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি। আর একদিন পর আজ হল প্রতিমা বিসর্জন।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে যান কৈলাসে স্বামীর ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন ‘পিতৃগৃহ’ এই ধরণীতে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে এসেছেন, গেলেন পালকিতে চড়ে।
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলা আড়াইটায় বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বিনাস্মৃতি স্নানঘাটে আদি মরণচাঁদ, নবকল্লোল পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি জানান, বিভিন্ন ঘাটে রাজধানীর ২২৫টি মণ্ডপের প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন চলছে সাগর সৈকতে। একইভাবে সারা দেশে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে চলছে বিসর্জনের পর্ব।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, মূলত ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মাধ্যমে আগের দিনই দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে ‘মাকে’ নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে।
বিসর্জনের আগে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার মন্দিরে মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উৎসব। দুপুরে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা এনে জড়ো করা হয় পলাশীর মোড়ে।
শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনি বাদ্যের সঙ্গে আধুনিক উচ্চস্বরের সাউন্ড সিস্টেমে দেবী বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার মানুষের এ শোভাযাত্রার সময় বিভিন্ন সড়কে জট দেখা যায়। পলাশী থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গা তীরে শেষ হয় শোভাযাত্রা।
প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর ভক্তকূল শেষবারের মতো ধুপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠে। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্যদিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের জানান, প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্তব্য চালু নেই