সাতক্ষীরা শহরে

মাইক্রোবাসে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা : গলাকাটা বিল!

সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলাসহ জেলা শহরে রমরমা ভাবে চলছে অবৈধ এ্যাম্বুলেন্সের জমজমাট ব্যবসা। জেলা বিআরটিএ জানিয়েছে ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত তাদের কাছে ৯টি এ্যাম্বুলেন্সের অনুমোদনের কাগজপত্র রয়েছে। এদের অধিকাংশ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের। জেলা ব্যপি প্রতিদিন অর্ধশতাধিক এ্যাম্বুলেন্স অবৈধভাবে প্রশাসনের নাকের ডকায় দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় হয়না। অবশ্য এসমস্ত গাড়ির চালকদের দাবী তারা প্রশাসনের সাথে মাসিক চুক্তির মাধ্যমে এসব মাইক্রোবাস অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স সাজিয়ে “শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত- ২৪ ঘন্টা সার্ভিজ’ এসব শ্লোগান লাগিয়ে শহরে চালিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, সাত বা আট সিটের মাইক্রোবাসের কাগজপত্র প্রস্তুত করতে গড়ে বিভিন্ন খাতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরজ হয়। অথচ একই আসনের বা সিসির আওতায় থাকা একটি মাইক্রোবাসের এ্যাম্বুলেন্স কাগজপত্র প্রস্তুত করতে বিভিন্ন খাতে খরজ হয় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এ্যাম্বুলেন্সের কাগজপত্র প্রস্তুত হওয়ার পর প্রত্যেকটি গাড়িতে নাম্বারের আগে “ছ” এবং শেষে ০১ বা ০২ থেকে পর্যায় ক্রমে নাম্বার ব্যবহার করা হয়। জানাগেছে, এ্যাম্বুলেন্সের কাগজপত্র প্রস্তুত করতে বেশি খরজ হওয়ায় সাধারণ মাইক্রোবাস হিসেবে কাগজপত্র প্রস্তুত পূর্বক উপরে একটি লাল লাইট, একটি টানা হরেনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লাগিয়ে এ্যাম্বুলেন্সের সাজে সাজিয়ে ব্যবহারের প্রবণতা সাতক্ষীরা শহরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ক্ষেত্রে রাস্তার রাজা নামে পরিচিত ট্রাফিক পুলিশরা জানলেও কোন ব্যবস্থা নেয়না। অভিযোগ রয়েছে তারা মাসিক চুক্তি ভিত্তিক উৎকোচ আদায় করে।
এদিকে সাতক্ষীরা বিআরটিএ জানায় চলতি বছরে আশাশুনি থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি ও কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২টি মোট ৩টি এ্যাম্বুলেন্সের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, এছাড়াও আরও কিছু এ্যাম্বুলেন্সের অনুমোদন রয়েছে তারা এজেলার বাইরে থেকে কাগজপত্র প্রস্তুত করায় তাদের কোন তালিকা এখানে নেই।
খোজ খবর নিয়ে আরও জানাগেছে, শহরের ফারজানা ক্লিনিক, নাজমুন ক্লিনিক, এম আলি পলি ক্লিনিক, ইসলামি ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল এ একটি করে এবং বুশরা হাসপাতালের ২টি এ্যাম্বুলেন্সের অনুমোদন রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্সের অনুমোদন থাকলেও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অসংখ্য এ্যাম্বুলেন্স শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কোন হিসাব নিকাশ নেই মানুষের কাছ থেকে বিপদের সময় গলাকাটা বিল আদায় করছে। প্রত্যেকটি এ্যাম্বুলেন্সের সাদা কালার থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন কালারের এ্যাম্বুলেন্স ঘুরতে দেখা যায়। বিশেষ করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ভিতর থেকে বাহির পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় যেন পা ফেলার জায়গা নেই। শুধু এ্যাম্বুলেন্স আর এ্যাম্বুলেন্স। প্রতি বছরই প্রতিটি মাইক্রোবাস বা এ্যাম্বুলেন্সের রিনিউ করার নিয়ম থাকলেও তা প্রতি বছর করা হয়না। সেখানেও সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত। পলাশপোল এলাকার জনৈক অভিজ্ঞ এ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, আমরা গাড়ি চালাই, রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে তার রিনিউ হয়নি, রিনিউ হয়েছে তা ব্লু বুক রুট পারমিট এর সমস্যা, আবার ফিটনেছ ইনসুরেন্স ড্রাইভিং লাইসেন্স ফেল এসমস্ত নানা করনে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই চলতে হয়।
সদর হাসপাতালের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, প্রত্যেকটি এ্যাম্বুলেন্সে অভিজ্ঞ চালক, অক্সিজেন সিলিণ্ডার, চাকা ওয়ালা ট্রলি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে এমন অভিজ্ঞ ব্যক্তির উপস্থিতি প্রত্যেকটি এ্যাম্বুলেন্সে থাকার নিয়ন থাকলেও তার কোনটিও মানা হচ্ছে না।
অপর এক কর্মকর্তা বললেন, অসুস্থ্য অথবা সড়ক দূর্ঘটনায় আহত এমন রুগী বহন করতে গিয়ে অনভিজ্ঞ চালকরা দ্রুত হাসপাতালে আসার পথে মাঝখানে আরেক দফা সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। পাশাপাশি অধিকাংশ এ্যাম্বুলেন্সে রুগী বহনের অন্তরালে মাদক বহনেরও নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে। বিগত ২০১২ সালের প্রথম দিকে সাতক্ষীরা শহরের খুলনার রোড এলাকার একটি ক্লিনিকের নামীয় এ্যাম্বুলেন্স ভোমরা ফেনসিডিল নিয়ে সাতক্ষীরায় আসার পথে খানপুর এলাকায় পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা গাড়ি উদ্ধার করতে গিয়ে দেখে এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রুগী নেই, সব ফেনসিডিলের বস্তা। পুলিশ উদ্ধার করে তা থানায় আনার পর গাড়িটি এখনও থানায় আছে বলে সূত্রগুলো জানায়।
এরপর শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় স্বপ্ন ক্লিনিকের মধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফেনসিডিল উদ্ধার করে। এঘটনায় ক্লিনিকের মালিক বিধান বাবুকে আসামী করে তৎকালিন সদর থানার ওসি কাদের বেগ একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, এ্যাম্বুলেন্স রুগী বাহী দ্রুতগামী একটি বাহন হওয়ায় রাস্তায় পুলিশ কোন চেক করেনা। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ এ্যাম্বুলেন্সে এখন ফেনসিডিলের নিরাপদ বাহন হিসেবে কাজ করছে।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা বিআরটি’র পরিদর্শক সালেহ আহম্মদ জানান, চাকরিতে প্রথম যোগদান করে সাতক্ষীরায় এসেছি। এমুহুর্তে তেমন কিছুই বলতে পারবো না। তবে যদি ৯টির অনুমোদন থাকে আর অর্ধ শতাধিক এ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় চলে তাহলে অবৈধ এ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় যতগুলো এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে এদের অধিকাংশই মাইক্রোবাসের লাইসেন্স। হাতে গোনা কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্সের অনুমোদন রয়েছে। কেন এসব অবৈধ এ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে শহরের জজকোর্ট এলাকায় নিরাময় ক্লিনিকের এ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে মামলা করলে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক চাপে পড়েছিলাম। ফলে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই খুব ঝামেলা হয়। এজন্য পারিনা।



মন্তব্য চালু নেই