৯ ঘণ্টার সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন জন কেরি
প্রথম বাংলাদেশ সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। আজ সকাল ১০টা ১০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি হযরত শাহজালাল (রহ.)আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে। বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গত বছর তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংক্ষিপ্ত এই সফরে কেরি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ‘দীর্ঘস্থায়ী ও বিস্তৃত সম্পর্ক’ আরও জোরদারে গুরুত্ব দেবেন বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর।
তার এই সফর নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কোনো বিবৃতি না দিলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে তারা ‘আনন্দিত’। আর প্রধানমন্ত্রী এটাকে ‘সৌজন্য সফর’ বলছেন।
তবে জন কেরি এমন এক সময়ে বাংলাদেশে এলেন, যার কয়েক মাস পরে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন। এছাড়া দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের ওপর ‘সন্তুষ্ট নয়’ বলেও ধারণা রয়েছে বিভিন্ন মহলে।
বাংলাদেশ যখন একের পর এক অভিযান চালিয়ে জঙ্গি নিধন করছে ঠিক সেই মুহূর্তেই ঢাকা সফর করছেন জন কেরি।
কেরির এই সফরে জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে বিভিন্ন অভিযানে যতটুকু সম্ভব ততটুকু সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে কেরি জানিয়েছেন, সহিংস ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরো জোরদার হবে।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক, ব্লগার এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হয়েছে। মুসলিম দেশ হলেও বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু এসব হামলা ও হত্যার ঘটনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
তবে বরাবরই বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়েই বলে আসছে তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন জানিয়েছেন, যে কোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার দেশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
আল কায়েদা বা আইএসের মত জঙ্গি গোষ্ঠীও যদি বাংলাদেশে হামলা চালায় তবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও প্রস্তত আছে বাংলাদেশ। এমনটাই জানিয়েছেন জিয়া উদ্দিন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখনও জিএসপি সুবিধা ফিরে না পাওয়ায় বাংলাদেশেরও অসন্তোষ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মি নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন কেরি।
সে সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে প্রেসিডেন্ট ওবামার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন তিনি।
তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশ ঘুরে যান। পরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষায়িত জ্ঞান’ দিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন তিনি।
সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জন কেরি। এছাড়া জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন তিনি। কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নয় ঘণ্টার সফরে জন কেরি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর এবং মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায়ও যাবেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে তার ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই