৯৪টি বছরেও জাতীয় স্বীকৃতি পায়নি চা শ্রমিক হত্যা দিবস
আজ ২০ মে। ঐতিহাসিক চা শ্রমিক হত্যা দিবস। ১৯২১ সালের এই দিনে মালিকদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কাছাড় ও সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক বিদ্রোহ করে নিজেদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চা-বাগানের মালিকদের সহায়তায় একদল ব্রিটিশ-গোর্খা সেনা নির্বিচারে গুলি করে শত শত চা-শ্রমিককে হত্যা করে। এরপর থেকে ওই দিনটি চা-শ্রমিকেরা ‘চা-শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন।
২০ মে চা শ্রমিকদের জীবনে বেদনাবহ একটি দিন। তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণের কলঙ্কময় অধ্যায়ের দিন।
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে একমাত্র চীন ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও চায়ের প্রচলন ছিল না। ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক ইংরেজ কর্মকর্তার বাবুর্চি ওয়ারিয়া করিমগঞ্জের সিলেরচর এলাকার একটি টিলায় প্রথম অপরিচিত গাছ দেখে তার সাহেবকে জানালে ওই ইংরেজ কর্মকর্তা সেটিকে চা গাছ হিসেবে সনাক্ত করেন। এরপর ইংরেজ কোম্পানিই এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে।
প্রথমে সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ তারপর চট্টগ্রামসহ দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। এরপর চা শিল্প করার জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়।
ইংরেজ কোম্পানির চা বাগান মালিকরা কম দামে শ্রম কিনে অধিক মুনাফা লাভের লক্ষ্যে আজীবন কাজের শর্তে চুক্তিবদ্ধ করে ভারতের এসব আদিবাসী গোষ্ঠীকে নিয়ে আসত। কিন্তু তাদের নামমাত্র মুজরি দেওয়া হতো।
বড় বড় পাহাড় পরিষ্কার করে চা গাছ রোপন করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে কত শ্রমিকের জীবন গেছে তার কোনো পরিসংখ্যান ব্রিটিশরা রেখে যায়নি। শ্রমিকদের সঙ্গে কৃতদাসের মতো আচরণ করত ব্রিটিশ চা বাগান মালিকরা। তাদের অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পণ্ডিত দেওশারন ও গঙ্গা দীতি ১৯২১ সালের ২০ মে চা শ্রমিকরা ‘মুল্লুকে চল’ (দেশে চল) আন্দোলনের ডাক দেয়। সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট রেলস্টেশন থেকে হেঁটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশরা গুলি চালিয়ে শত শত চা শ্রমিককে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। সেখান থেকে অনেক শ্রমিক পালিয়ে এলেও আন্দোলন করার অপরাধে তাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
ঘটনার পর একে একে ৯৪টি বছর কেটেছে। কিন্তু নির্মম হত্যাযজ্ঞের বিষাদময় স্মৃতি বংশ পরস্পরায় আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রায় ৭ লাখ চা শ্রমিক। কিন্তু আজও এই দিনটির কোনো জাতীয় স্বীকৃতি তারা পায়নি।
মন্তব্য চালু নেই