৭২ ঘণ্টার পরও মোটিভ নিয়ে ধোঁয়াশা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের ৭২ঘণ্টা পার হলেও তা নিয়ে নির্দিষ্ট একটি ধারণায় দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নাকি জঙ্গি ইস্যুতে দৃষ্টি ঘোরাতে জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিয়েও ভাবছে পুলিশ।

এছাড়া পারিবারিক কলোহ কিংবা পরোকিয়ার বিষয় মাথায় রেখে তদন্তে এগুচ্ছে পুলিশ।

পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা চাপতিতে হাতের ছাপ, ড. একেএম শফিউল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় নাকি? এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পুলিশ।

তবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো ধারণায় পৌঁছাতে পারেনি পুলিশ।

এ চাঞ্চল্যকর হত্যা নিয়ে মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রোববার রাতে জরুরি বৈঠকও করেছেন। বৈঠকে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধার ও সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন দিক মাথায় নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেই ফেসবুকে তাৎক্ষণিক পেইজ খুলে আপডেট করা হয়েছে। এ পেইজের পেছনে শিবির জড়িত থাকতে পারে। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠন জড়িত কি না সে বিষয়টিও সামনে নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে এগুচ্ছে পুলিশ।

পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রমতে ঘটনায় শিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে। শিবিরের প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তারাই কৌশলে তাৎক্ষণিক ফেসবুক পেজ খুলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ঘটনার দায় তাদের ওপর থেকে সরাতে চাইছে।

হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের এক নিকটাত্মীয় সাংবাদিকদের জানান, আমরা ধারণা করছি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত। তবে এ ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, জামায়াত-শিবির জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পারিবারিক কলহ আর বিভাগের দ্বন্দ্বের ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে আমাদের। এ ছাড়া জঙ্গি গোষ্ঠীর ব্যাপারটিও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।

জঙ্গী গোষ্ঠির সংশ্লিষ্টতা, জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা, পারিবারিক কারণসহ বেশ কয়েকটি কারণ পুলিশের মাথায় গত ৩ দিন ধরে ঘোরপাক খাচ্ছে। ইতোমধ্যেই রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার ব্যরিস্ট্যার মাহবুবুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন জানান, মতাদর্শগত কোনো বিরোধের কারণে উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকতে পারে। তারা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছে।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শনিবার হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুকে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামের পেজটি সম্পর্কে তদন্ত হচ্ছে। আদৌ এ ধরনের কোনো সংগঠন রয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এ নিয়ে পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রাত করে বাসায় ফেরার পরও অধ্যাপক শফিউলকে রাতে খুন না করে দিনের আলোয় খুন করা হয়েছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছে খুনিরা।

জঙ্গিরা সাধারণত দিনের আলোতেই খুনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। আর হত্যা করতে তারা ধারালো অস্ত্রেরও ব্যবহার করে। এসব কারণে খুনের সঙ্গে জঙ্গি কানেকশনের সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সূত্র জানায়, অধ্যাপক শফিউলকে হত্যার আগে তার বাসায় কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা আছে কিনা তদন্তে সে বিষয়টিও গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, খুনিরা আগে থেকেই ওই শিক্ষকের গতিবিধি নজরে রাখার পর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই