৬৮ বছর পর ভোট দিচ্ছেন বিলুপ্ত ছিটের মানুষ
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা রহিম উদ্দিনের বয়স এখন ৭৫ বছর। এই বয়স পর্যন্ত তিনি কখনো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কোনো ধরনের ভোটাধিকারের মধ্যে ছিলেন না তিনি বা তাঁর পরিবার কিংবা এলাকাবাসী। দেশ স্বাধীন হলেও তাঁদের নাগরিকত্ব ছিল না। ৬৯ বছর পর আজ এই এলাকার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলেন।
পঞ্চগড়ের তিনটি উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহলযুক্ত আটটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আজ সোমবার উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। এই আটটি ইউনিয়নে বিলুপ্ত ছিটমহল রয়েছে ৩৬টি। সকাল আটটা থেকে ভোট নেওয়া শুরু হয়েছে। বিলুপ্ত ছিটমহলের নতুন বাংলাদেশি নাগরিকেরা পুরোনো বাংলাদেশিদের সঙ্গে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন।
আজ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, নতুন-পুরোনো ভোটাররা সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিচ্ছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স নজরদারি করছে।
বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন আজ। তেমনই একজন রহিম উদ্দিন (৭৫)। পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহল গারাতির বাসিন্দা তিনি। স্ত্রীসহ পরিবারের পাঁচজন ভোট দিতে এসেছেন। পাঁচজনই প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছেন। উৎসাহ-উদ্দীপনাও এ কারণে বেশি।
সকাল সাড়ে নয়টায় পুকুরিডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় রহিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। প্রথম আলোকে তিনি জানান, জীবনে প্রথম ভোট দিতে পেরে খুব আনন্দিত তিনি। ভোটার হওয়ায় তাঁদের দাম বেড়েছে। লোকজন এসে ভোট চাইছেন। এ অভিজ্ঞতা একদম নতুন। আগে এই এলাকায় ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। জনপ্রতিনিধিও ছিল না। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের এ সুযোগ পেয়ে তাঁর খুব ভালো লাগছে বলে জানালেন।
পঞ্চগড়ের তিনটি উপজেলার আটটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯৮ জন এবং সদস্য পদে ৩২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার দুটি ইউপি হাফিজাবাদ ও হাঁড়িভাসা, বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ কাজলদীঘি, মাড়েয়া, বড় শশী ও ভাউলাগঞ্জ এই চারটি ইউপি এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ও ট্রেপ্রিগঞ্জ এই দুটি ইউপি রয়েছে। এই আটটি ইউপিতে বিলুপ্ত ছিটমহল রয়েছে ৩৬টি। বিলুপ্ত ছিটমহলযুক্ত আটটি ইউপিতে ভোটার প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহল থেকে নতুন করে ৮ হাজার ৯৩৫ জন ভোটার সংযুক্ত হয়েছেন। আটটি ইউপির মোট ৭২টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হচ্ছে।
বিলুপ্ত ছিটমহলের গারাতির বাসিন্দা সোনা মিয়া হাফিজাবাদ ইউপিতে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রথম আমরা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এখানে আগে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ ছিল না। আমরা নাগরিক হয়েছি। এখন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে অংশ নিতে চাই।’
ছিটমহল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মফিদা রহমান। এই নির্বাচনকে আন্দোলনের সফলতা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা এখন ভোটাধিকার পেয়েছি। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছি। এ দৃশ্য দেখেই আনন্দ হচ্ছে।’
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে বলে জানালেন বোদা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আউয়াল। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন আছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
মন্তব্য চালু নেই