৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বাজারমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা হবে

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাজারমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘বেসিক এডুকেশনের ওপর জোর দেয়া হলে ভবিষতে শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা অনুযায়ী পেশাগত শিক্ষা বেছে নিতে পারে।’

রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষায় বিনিয়োগ: প্রাকবাজেট ভাবনা’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আসন্ন অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আগেও বলেছিলেন এবারের অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানো হবে। অবশেষে তিনি প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দিলেন। এ জন্য অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

বাজেট পূর্ব বৈঠক নিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বাজেটের পূর্বে মন্ত্রী, সচিব সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসেন। সেখানে সবাই যার যার বরাদ্দ চান। আমাকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তোমার কী লাগবে? আমি বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী, আপনার কথায় সব ছেলে-মেয়েকে স্কুলে নিয়ে এসেছি। এখন তাদের ক্লাস রুম দিতে পারছি না। লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরী বানিয়ে দিতে পারছি না। এখন পথ একটাই তাদের আবার বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়া।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, সব কিছু হবে। সবাই পড়াশোনা করবে। পড়াশোনা করতে যা যা লাগে সব কিছুর যোগান দেয়া হবে।’ ভবিষতে জিডিপি’র ৪ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী শিক্ষামন্ত্রী।

যারা পরীক্ষা দেয় তারই পাস করে এমন একটি প্রচলিত ধারণার ব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একবার ৮৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখলাম অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজী এবং গণিতে ফেল। তখন আমরা মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নিলাম ‘‘সেকায়েপ’’ নামে। যার মাধ্যমে ঐসব স্কুলে ইংরেজি এবং গণিতের প্রশিক্ষিত মেধাবী শিক্ষক দেয়া শুরু করলাম। এ কারণে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে, পাস করছে। এখন আমাদের শুনতে হয় পাস কেন করে? ভালো পড়াচ্ছে, পড়ছে তাই পাস করছে।’

শিক্ষাক্ষেত্র নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীদেন প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ চলছে। যা খুবই কঠিন। পূর্বাচলে অটিস্টিক শিশুদের জন্য ইনস্টিটিউট তৈরি হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য সবাই সমান শিক্ষা সেবার আওতায় আসবে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মুসার সভাপতিত্বে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

গত অর্থবছরে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষাখাতের বরাদ্দ তুলে ধরে কিরণ বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে সর্বশেষ অর্থবছরে বাজেট ছিল ১১.৬ শতাংশ। অথচ অনেক অনুন্নত, উন্নয়শীল দেশে শিক্ষাকে বাজেট ব্যয়ে অগ্রাধিকার দেয়ার নজীর রয়েছে। এর মধ্যে তানজিনিয়ায় ২৬ শতাংশ, লেসোথোতে ২৪ শতাংশ, বুরুন্ডিতে ২২ শতাংশ এবং টোগো১৭ শতাংশ ব্যয় করে থাকে। তিনি বলেন, দেশজ উৎপাদনে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেটি দরিদ্রবান্ধন নয়।

তিনি বলেন,একদিকে যেমন শিক্ষিতের হার বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের হার। এতে প্রমাণিত হয় যে ধরনের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা বেকারত্ব তৈরি করছে। কোনোভাবেই তা কর্ম উপযোগী নয়। এসময় তিনি কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নসহ বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র পরিচালক ড. এসএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা পিএসসি, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়াম্যান মিলি রহমান এবং সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা আইরিন জামান।

বক্তারা শিক্ষার্থীদের মুল্যবোধ তৈরিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, কোচিং সেন্টার বন্ধ করণ, প্রশ্ন ফাঁস রোধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ শিক্ষাখাতে প্রয়োজনী অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান।

তারা বলেন, ‘জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় হওয়া উচিত। গতবছর ব্যয় ছিল জিডিপির ২.২ শতাংশ। যা এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় নগণ্য।’ উন্নয়নের বাজারে টিকে থাকতে হলে শিক্ষাই একমাত্র হাতিয়ার উল্লেখ করে বক্তরা এখাতে পর্যাপ্ত অর্থ দেয়ার আহ্বান জানান।



মন্তব্য চালু নেই