৫ বছরে শাস্তি পেয়েছেন ৬৬ হাজার পুলিশ
দেশে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন অভিযোগে ৫০৪ জনকে চাকরিচ্যুত কিংবা বাধ্যতামূলক অবসরসহ ৬৬ হাজার ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবারের সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর টেবিলে ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য হাজেরা খাতুনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে অনুসন্ধান সাপেক্ষে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৬১ হাজার পুলিশকে লঘুদণ্ড, ৩ হাজার ৬০০ পুলিশকে অন্যান্য গুরুদণ্ড ও ৫০৪ জন পুলিশকে চাকুরিচ্যুত কিংবা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে।’
সাধারণ মানুষ থানায় জিডি করতে গেলে কর্মরত-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আদায় ও নাজেহালের অভিযোগ সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে সম্প্রতি ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের মতো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান খাঁন জানান, পুলিশের নির্ধারিত পোশাক ও হ্যান্ডকাপ খোলাবাজারে বিক্রির বিষয়টি ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ব্যবহৃত পোশাকের সঙ্গে নিজস্ব আইডি কার্ড ব্যবহারের জন্যও নির্দেশনা পেয়েছেন।
মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিনের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধীরা তাদের গতিবিধি সময় ভেদে পরিবর্তন করে থাকে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৌশলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে এ ধরনের প্রতারক গোষ্ঠীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।’
বাংলাদেশে কোনও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড বিদ্যমান নেই দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এই সরকার কোনোভাবেই বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন, অনুমোদন, অনুসমর্থন অথবা উৎসাহিত করে না। আইনসঙ্গত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে কোনও ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে সে বিষয়ে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।’
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হিসেবে বাংলাদেশ ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ ও পাশ্ববর্তী দেশের চাহিদার ভিত্তিতে স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। ভারতে বিপুল পরিমাণে চাহিদার কারণে বাংলাদেশে আসা স্বর্ণ সেখানে পাচার হয়ে থাকে। আর বাংলাদেশে জব্দ করা স্বর্ণের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে।’
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম রিফাত আমিনের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশে মাদকাসক্তের সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয়ের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সংসদ সদস্যের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘জাতির পিতার খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে টাস্কফোর্স। এছাড়া ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ছবি সংবলিত তথ্যপ্রেরণপূর্বক তাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে বিদেশে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত ছয় আসামি এএম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, আব্দুর রশীদ, আব্দুল মাজেদ, খান মোসলেমউদ্দিনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। ইন্টারপোল সদস্যভুক্ত সব দেশকে পলাতক আসামিদের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রেরণ করা হয়েছে।
আসামী এএম রাশেদ চৌধুরীর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে এবং এসএইচএমবি নূর চৌধুরীর অবস্থান কানাডায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এই দুটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে তা তরান্বিত করতে দেশ দুটিতে ল-ফার্ম নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পলাতক অন্যান্য আসামির অবস্থান নিশ্চিতকরণের জন্য ইন্টারপোল সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মন্তব্য চালু নেই