৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে ১৭ মাসেই
গত ১৭ মাসে রেকর্ড পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালন জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। যা বিগত ৫ বছরের তুলনায় কয়েকশ’ গুণ। তবে বাংলাদেশ বিমানের ডিজিএমসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে চোরাচালান। এই পরিস্থিতির জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা ও বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্কই মূলত দায়ী।
বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দাদা বিভাগের তথ্যমতে, গত ১৭ মাসে হযরত শাহজালাল (রহ.) আর্ন্তাজাতিক বিমানবন্দরে উদ্ধার হয়েছে ৬৭৭ কেজি স্বর্ণ। টাকা অংকে যা প্রায় ৩৩৬ কোটি। এসময় চালানসহ আটক হয় ৮৮ জন। যেখানে এই ১৭ মাসের আগের পাঁচ বছরে স্বর্ণ ধরা পরেছিল মাত্র ১২ কেজি। যা টাকার অংকে প্রায় ৬ কোটি।
যদিও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিনের কথিত ‘ধর্মপুত্র’ মাহমুদুল হক পলাশ আটক হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, ‘পাচারের ৩০ ভাগ সোনা উদ্ধার হয়। বাকি সোনার হদিস পাওয়া যায় না।’
গত ১৯ নভেম্বর বিমানের চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটক হওয়ার আগের ১০ দিনে শাহজালাল বিমানবন্দরে শুল্ক গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে ১২ কেজি ১০০ গ্রাম স্বর্ণ। অথচ আটক হওয়ার পরবর্তী ১০ দিনে ধরা পড়েছে মাত্র ৭৭৫ গ্রাম। তবে এসময় একটি বেসরকারি বিমানের নিরাপত্তা কর্মীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মালামাল আটক করে শুল্ক গোয়েন্দারা।
স্বর্ণ চোরাচালান প্রসঙ্গে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক ড. মইনুল খানের বলেন, ‘আমাদের তৎপরতার কারণেই এখন চোরাচালান অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে ১২ নভেম্বর মাজহারুল আফসার নামের এক কেবিন ক্রুকে স্বর্ণসহ আমরা ধরি। পরে এয়ারপর্ট থানায় মামলা দায়ের করে তাকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। এসময় ডিবির কাছে জিজ্ঞাসাবাদ তিনি চোরকারবারীদের সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ তারিখে ডিবি পুলিশ বাংলাদেশ বিমানের ডিজিএমসহ ৫ কর্মকর্তাকে আটক করে। যার ফলে এই চোরাকারবারীর ওই চক্রটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইন্টিলিজেন্টের তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছি। যার ফলে আপনা-আপনিই বিমানের ফাঁকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে বিমানের পাখা ও টয়লেট ছিল স্বর্ণ চোরাচালানের প্রধান স্থান। এরকম স্থানগুলিকে আমরা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলেই এখন চাইলেই আর চোরাচালান করা সম্ভব না।’
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিনের ছেলে ফ্লাইট ক্যাপ্টেন যুবায়েরের বন্ধু হওয়ার সুবাদে ২০১০ সাল থেকে বিমানের বিভিন্ন শাখায় অবাধ যাতায়াত শুরু করেন মাহমুদুল হক পলাশ। পরে ওই বছরেই হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কাবো এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বিমানের কাছে লিজ দেয়ার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেন তিনি। আস্তে আস্তে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে শুরু করেন নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি সুপারিশ। এভাবেই তিনি বর্তমান চিফ শিডিউলার ক্যাপ্টেন শহীদসহ শিডিউল বিভাগের আবদুল মতিন, শাহ আলম মিরন, সরোয়ার এবং নাসিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। লেনদেনের ভিত্তিতে শিডিউল ম্যানেজের কাজও তিনি করতেন। এভাবেই পলাশ ধীরে ধীরে বৈমানিকদের নেতা হয়ে উঠতে শুরু করেন।
গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পলাশ বিমানের বিভিন্ন শাখায় তার অবাধ যাতায়াত, স্ত্রী কেবিন ক্রু নুরজাহানের মাধ্যমে অন্য ক্রুদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে বিমানে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কথা স্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১৯ তারিখ রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন, ফ্লাইট ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মাদ আসলাম শহীদ, শিডিউল ইনচার্জ তোজাম্মেল হোসেন, বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ এবং উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশিদকে সোনা চোরাচালান মামলায় গ্রেপ্তার করে ডিবি। এর আগে ১২ নভেম্বর বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে সোনা উদ্ধারের পর মাজহারুল আফসার নামের একজন কেবিন ক্রুকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বিমানের ৪ শীর্ষ কর্তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
মন্তব্য চালু নেই